ত্রিপুরায় ধর্মীয় সহিংসতার সংবাদ করায় ২ সাংবাদিক আটক
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের তোপের মুখে পড়া দুই নারী সাংবাদিককে আটক করেছে পুলিশ। দেশটির ডানপন্থী কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) মামলা দায়েরের পর রোববার তাদের আটক করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
গ্রেফতারকৃত দুই নারী সাংবাদিক সমরুদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝা বলেছেন, তারা ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় সংবাদ করেছিলেন। এক টুইটে সমরুদ্ধি সাকুনিয়া বলেছেন, আসামের করিমগঞ্জের নীলামবাজার থানায় তাদের আটক করা হয়েছে। গোমতী জেলার এসপি তাদের আটকের নির্দেশ দিয়েছেন বলে টুইটে জানিয়েছেন এই সাংবাদিক।
বিজ্ঞাপন
ত্রিপুরা পুলিশ বলেছে, সমরুদ্ধি সাকুনিয়ার একটি টুইট ঘিরে মামলা হয়েছে। ওই টুইটে তিনি একটি অর্ধ-পুড়ে যাওয়া বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে কোরআন পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। পুলিশ বলছে, তারা পুড়ে যাওয়া কোনো ধরনের ধর্মীয় নথি পাননি। পরে ওই দুই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগরতলা থানায় ডাকা হয়। তারা রাজ্য থেকে পালিয়ে যেতে পারেন বলে প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের আটক করা হয়।
— Maktoob (@MaktoobMedia) October 21, 2021
তবে রোববার সকালের দিকে সাংবাদিক সমরুদ্ধি সাকুনিয়া ও স্বর্ণা ঝা বলেছেন, পুলিশ তাদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে হোটেল ছেড়ে তাদের আগরতলায় যেতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলেছে, পুলিশেরওই দুই সাংবাদিককে একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ২১ নভেম্বর থানায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর ঘটনায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল।
ভারতীয় এই দুই নারী সাংবাদিক এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্ক নামের একটি গণমাধ্যমে কর্মরত। এইচডব্লিউ নিউজ নেটওয়ার্কের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ তাদের হোটেল ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি এবং বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য এক সপ্তাহের কম সময় দেওয়া সত্ত্বেও আটক করেছে। এটি ত্রিপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নিছক হয়রানি এবং গণমাধ্যমকে টার্গেট করার ঘটনা।
এদিকে, দুই নারী সাংবাদিককে পুলিশ আটক করার পর ভারতের গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন দ্য এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া এক টুইটে বলেছে, তারা সাংবাদিক আটকের নিন্দা এবং তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করছে। একই সঙ্গে তাদের অবাধ চলাফেরা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল থেকে ত্রিপুরায় মসজিদ ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ত্রিপুরায় মসিজদ ভাঙচুরের অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে জানায়, প্রতিবেদনগুলো ভুয়া এবং ঘটনার সম্পূর্ণ ভুল উপস্থাপন।
মন্ত্রণালয় জানায়, কাকরাবনের দরগাবাজার এলাকার মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারপরও গণমাধ্যমের ভুয়া প্রতিবেদনের পর মহারাষ্ট্রে বিক্ষোভ ও সহিংসতার খবর এসেছে।
সহিংসতার খবর প্রকাশকারী শতাধিক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবকে নির্দেশ দিয়েছিল ত্রিপুরা পুলিশ। এই ঘটনায় ত্রিপুরা পুলিশ দেশটির সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় প্রচারকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে অন্তত ৫টি মামলা দায়ের করে।
এর আগে, বাংলাদেশে দুর্গা পূজার সময় পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ঘিরে গত মাসের শেষের দিকে ত্রিপুরায় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়। ২০ অক্টোবর ত্রিপুরাজুড়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় অন্তত ৬টি মসজিদ এবং মুসলিমদের এক ডজনেরও বেশি বাড়িঘর-দোকানপাট ভাঙচুর করা হয় বলে তেলেঙ্গানা রাজ্যভিত্তিক দৈনিক দ্য সিয়াসাত ডেইলি জানায়।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, বজরং দল এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ব্যানারধারী কিছু সদস্য এই হামলার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানায় এই সংবাদমাধ্যম।
এসএস