ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল, তার স্ত্রী ও এক সন্তানসহ অন্য আরও চারজন সৈন্য নিহত হয়েছেন। শনিবার স্থানীয় সময় সকালের দিকের প্রাণঘাতী এই হামলায় আহত আরও দুই সৈন্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

এনডিটিভি বলছে, মণিপুরের মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চূড়াচাঁদপুর জেলায় সন্ত্রাসী হামলায় আসাম রাইফেলসের এক কর্নেলসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে মণিপুরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হামলার এই ঘটনা স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঘটেছে।

মণিপুরভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) শনিবারের এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। তবে এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলায় দায় স্বীকার করেনি।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলেছে, নিহত কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠী আসাম রাইফেলসের ৪৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। মণিপুরের বেহিয়াং থানার সিংঘাটের কাছে সায়লসি এবং সেকেন গ্রামের মধ্যবর্তী জঙ্গল ঘেরা এলাকায় তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় গাড়িবহরের অন্য গাড়ি থেকে জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেন।

সন্ত্রাসীদের অতর্কিত এই হামলায় আরও কয়েকজন জওয়ান আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মণিপুরের ওই এলাকায় অভিযান শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস।

পুলিশের সূত্র এনডিটিভিকে বলেছে, সামরিক বাহিনীর গাড়িবহর আক্রান্ত হওয়ার স্থানে এখনও থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। চূড়াচাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রথম অতর্কিত হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটল। রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি উত্তরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এই হামলা হয়েছে।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং হামলায় ওই কর্নেল এবং তার পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাল্টা-অভিযান শুরু হয়েছে। এদিকে, এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, মনিপুরের চূড়াচাঁদপুরে আসাম রাইফেলসের গাড়িবহরে কাপুরুষোচিত হামলা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং নিন্দনীয়। আসাম রাইফেলসের একজন কর্নেল, তার পরিবারের দুই সদস্যসহ ৫ সাহসী সৈন্যকে হারাল দেশ। শোকাহত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অনেক রাজ্যের মতো মণিপুরেও ডজনখানেক সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, যারা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন অথবা বিচ্ছিন্নতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান এবং চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে মণিপুরের এমন কিছু এলাকায় গত কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনী মোতায়েন রেখেছে ভারত।

কিন্তু মণিপুরের এই সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে ২০১৫ সালে এই রাজ্যে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ২০ সদস্যের প্রাণহানি ঘটে।

এসএস