ইরাক থেকে যাওয়া শরণার্থীদের বেআইনিভাবে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেওয়া নিয়ে ইউরোপের দুই দেশ পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটের পেছনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যাতেউসুজ মোরাউইচকি।

বুধবার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ইরাক থেকে যাওয়া শরণার্থীদের বেআইনিভাবে পোল্যান্ডে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেওয়া নিয়ে গত সোমবার পোলিশ-বেলারুশ সীমান্ত উত্তাল হয়ে ওঠে।

ইউরোপে বসবাসে ইচ্ছুক মধ্যপ্রাচ্যের এসব শরণার্থীকে গ্রহণে অনিচ্ছুক পোলিশ কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে ঠেকাতে সোমবার বেলারুশ সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় দেশটি।

সোমবারের ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় তিন হাজার শরণার্থী বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছে। তাদের রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে বেলারুশের সেনা। শরণার্থীদের হাতে ফেন্স কাটার। পুলিশের সঙ্গে লড়াই করার অস্ত্রও আছে তাদের হাতে। সে সবও বেলারুশ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার এই শরণার্থীদের সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষ হয় পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীদের। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। তবে পোল্যান্ড জানিয়েছে, বেশ কয়েক জায়গায় ফেন্সের (সীমান্ত বেড়া) ক্ষতি হয়েছে।

বেলারুশের পুলিশ নেতৃত্ব দিয়ে শরণার্থীদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এরপর সীমান্ত পেরনোর পরামর্শ দিচ্ছে। সংঘর্ষের পর অবশ্য সীমান্তেই ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান করছেন শরণার্থীরা।

কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সামনে এনে পোল্যান্ড দাবি করেছে, বেলারুশ ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করছে। শরণার্থীদের তারা ইউরোপে ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং সে কারণে তাদেরই পরিকল্পনায় পোল্যান্ডের এই শরণার্থী রুট তৈরি হয়েছে।

বুধবার বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোলিশ-বেলারুশ সীমান্তে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটের পেছনে মূল খেলোয়াড় হিসেবে বেলারুশের একনায়কতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যাতেউসুজ মোরাউইচকি। তার ভাষায়, এই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড (মূল পরিকল্পনাকারী)’ হচ্ছে মস্কো।

প্রসঙ্গত, বেলারুশের একনায়ক প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত এলাকায় এখন খুবই ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। প্রতিকূল ওই আবহাওয়ার মধ্যেই ইউরোপীয় এই দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় বর্তমানে অন্তত ২ হাজার অভিবাসী অবস্থান করছেন। আটকে পড়া এসব শরণার্থীর বেশিরভাগই তরুণ ও যুবক। অবশ্য তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন।

পোল্যান্ডের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এই রাস্তা তৈরি করেছে বেলারুশ। শরণার্থীদের ঢুকিয়ে তারা পোল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।

দেশটির বক্তব্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান লুকাশেঙ্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বেলারুশের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে বেলারুশ। শরণার্থী ঢুকিয়ে তারা পাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ তৈরি করছে।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ হিসেবে শরণার্থী সংকট সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পোল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যাতেউসুজ মোরাউইচকি। পরে পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘লুকাশেঙ্কো যে হামলা করছেন, এর মূল পরিকল্পনা হয়েছে মস্কোতে। আর এর মূল পরিকল্পনাকারী প্রেসিডেন্ট পুতিন।’

শরণার্থীদের প্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে রুশ ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন মোরাউইচকি।

উল্লেখ্য, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত এলাকায় আটকে পড়া এই শরণার্থীরা মূলত ইরাক থেকে এসেছেন। কুর্দি সম্প্রদায়ের এই মানুষরা ইরাক থেকে বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর আগে এই রুট দিয়ে শরণার্থীরা যাতায়াত করতেন না বলে দাবি করেছে পোল্যান্ড।

টিএম