গত এপ্রিলে টিকার সরবরাহ বন্ধের পর প্রথমবারের মতো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন বণ্টনের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সে কোভিড-১৯ টিকার সরবরাহ শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। দরিদ্র দেশগুলোতে টিকাদানে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী ভারতের ওই স্থগিতাদেশের অবসানের ফলে শিগগিরই টিকার সরবরাহ শুরু হতে পারে বলে দেশটির স্বাস্থ্য খাতের দু’টি সূত্র জানিয়েছে।

কোভ্যাক্স উদ্যোগের সমন্বয়কারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত অক্টোবরে ভারতের প্রতিবেশী ও অংশীদারদের মাঝে ৪০ লাখ ডোজ টিকার সরবরাহ করার পর এই কর্মসূচি চালু রাখতে দেশটিকে পুনরায় টিকার সরবরাহ শুরুর আহ্বান জানায়।

ভারতের কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়ার পর কোভ্যাক্সের কর্মকর্তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য কোভিশিল্ড টিকার বরাদ্দের পরিকল্পনা শুরু করেছেন বলে ওই দুই সূত্রের একটি জানিয়েছে। এছাড়া টিকার সরবরাহ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে একটি চূড়ান্ত চুক্তি ঝুলন্ত অবস্থায় আছে বলেও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র দুটি জানিয়েছে।

ব্রিটেনের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনা টিকা বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে।

গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হওয়ায় দেশের নাগরিকদের টিকার আওতায় আনার উদ্দেশে ভ্যাকসিনের রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এরপর থেকে প্রত্যেক মাসে কোভিশিল্ডের উৎপাদন প্রায় চারগুণ বাড়িয়ে ২৪ কোটি ডোজ করেছে এসআইআই।

ওই সূত্র বলছে, এসআইআইয়ের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করতে হবে। এরপর লেবেলিং, প্যাকিং এবং প্রত্যেকটি চালানের জন্য কর্তৃপক্ষের রফতানির অনুমতির দরকার হবে। যে কারণে ভারত সরকার রফতানির অনুমতি দেওয়ার পরও প্রথম চালানের সরবরাহ এখন থেকে আগামী কয়েক সপ্তাহের আগে সম্ভব নয়।

তবে এ বিষয়ে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এর আগে, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিনের ১৫ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডোজ অব্যবহৃত রয়েছে। দেশটির ৯৪ কোটি ৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশই করোনার একটি করে এবং ৩৭ শতাংশ দু’টি ডোজ পেয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পর দেশটিতে টিকাদানের গতি ধীর হয়েছে।

গত মাসে এসআইআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালা রয়টার্সকে বলেছিলেন, আগামী নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে তার কোম্পানি কোভ্যাক্সে প্রত্যেক মাসে গড়ে ২ কোটি থেকে ৩ কোটি ডোজ পাঠাতে পারে। ভারতের চাহিদা মিটে গেলে আগামী জানুয়ারি থেকে এই সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে।

গত শুক্রবার ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, কোভ্যাক্সের অর্থ আছে এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন কেনার চুক্তিও আছে। কিন্তু উৎপাদনকারীরা তাদের ভূমিকা পালন করছে না।

গত সেপ্টেম্বরে কোভ্যাক্স বিশ্বজুড়ে চলতি বছরে ভ্যাকসিন বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ কমিয়ে ১ দশমিক ৪২৫ বিলিয়ন ডোজ করেছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস