ইরাক থেকে যাওয়া শরণার্থীদের বেআইনিভাবে পোল্যান্ডে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বেলারুশ। তবে শরণার্থীদের নিতে অনিচ্ছুক পোলিশ কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে ঠেকাতে বেলারুশ সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত।

একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় তিন হাজার শরণার্থী বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছে। তাদের রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে বেলারুশের সেনা। শরণার্থীদের হাতে ফেন্স কাটার। পুলিশের সঙ্গে লড়াই করার অস্ত্রও আছে তাদের হাতে। সে সবও বেলারুশ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার এই শরণার্থীদের সঙ্গে রীতিমতো সংঘর্ষ হয় পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীদের। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। তবে পোল্যান্ড জানিয়েছে, বেশ কয়েক জায়গায় ফেন্সের (সীমান্ত বেড়া) ক্ষতি হয়েছে।

কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সামনে এনে পোল্যান্ড দাবি করেছে, বেলারুশ ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করছে। শরণার্থীদের তারা ইউরোপে ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং সে কারণে তাদেরই পরিকল্পনায় পোল্যান্ডের এই শরণার্থী রুট তৈরি হয়েছে। যে ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে, তা স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু সেসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

বেলারুশের পুলিশ নেতৃত্ব দিয়ে শরণার্থীদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এরপর সীমান্ত পেরনোর পরামর্শ দিচ্ছে। সংঘর্ষের পর অবশ্য সীমান্তেই ক্যাম্প তৈরি করে অবস্থান করছেন শরণার্থীরা।

এই শরণার্থীরা মূলত ইরাক থেকে এসেছেন। কুর্দি সম্প্রদায়ের এই মানুষরা ইরাক থেকে বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর আগে এই রুট দিয়ে শরণার্থীরা যাতায়াত করতেন না বলে পোল্যান্ডের দাবি।

পোল্যান্ডের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এই রাস্তা তৈরি করেছে বেলারুশ। শরণার্থীদের ঢুকিয়ে তারা পোল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।

অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই এই অভিযোগ করছে পোল্যান্ড। দেশটির বক্তব্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান লুকাশেঙ্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বেলারুশের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে বেলারুশ। শরণার্থী ঢুকিয়ে তারা পাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ তৈরি করছে।

শুধু পোল্যান্ড নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও একই অভিযোগ করেছেন। বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার ইইউয়ের একাধিক দেশের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা রয়েছে।

এদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই অভিযোগ করেছেন। পোল্যান্ডকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বস্তুত এর আগেও পোল্যান্ড-জার্মান সীমান্তে পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সাহায্য করেছে জার্মান প্রশাসন। জার্মানির বক্তব্য, শরণার্থীরা পোল্যান্ড দিয়ে জার্মানি ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এদিকে গত কয়েকমাস ধরেই শরণার্থীদের ঠেকাতে সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে রেখেছে পোল্যান্ড। বেশ কিছু শরণার্থীকে সীমান্ত থেকে ঠেলে বেলারুশে ঢুকিয়েও দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য, দুই দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে সমস্যায় পড়ছেন শরণার্থীরা। প্রবল ঠান্ডায় জঙ্গলের মধ্যে তাঁবু বানিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। বহু শরণার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও জানিয়েছে তারা।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম