করোনায় দৈনিক হাজারের বেশি মৃত্যু এবং হাজার হাজার হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে শেষ হয়েছে সপ্তাহব্যাপি বেতন-সহ ছুটি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে এক সপ্তাহ আগে দেশটিতে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল; যার মেয়াদ শেষ হয়েছে সোমবার।

একই দিন দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৯ হাজার ৪০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এই ভাইরাসে মারা গেছেন এক হাজার ১৯০ জন। এর আগে, শনিবার দেশটিতে সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৩৩৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৯৫ জনের প্রাণহানি ঘটে গত বৃহস্পতিবার।

ধীরগতির টিকাদান কর্মসূচির কারণে ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমিয়ে আনতে গত ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সবেতন সাপ্তাহিক ছুটির নির্দেশ জারি করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

দেশটির অঞ্চলগুলোর এই ছুটির সময়সীমা বাড়ানোর এখতিয়ার রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত মাত্র দেশটির ব্রায়ানস্কের পশ্চিমাঞ্চল এবং নোভগোরডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ মোট পাঁচটি অঞ্চল সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করেছে। তবে বেশ কয়েকটি অঞ্চল রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এবং শপিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য টিকা নেওয়ার প্রমাণ দেখানোর নির্দেশনা জারি করেছে।

দেশটির ভেলিকি নোভগোরড শহর করোনায় ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এই শহরের ৭৫ বছর বয়সী বাসিন্দা অ্যান্তনিনা লিওন্টিভা এএফপিকে বলেছেন, ‘এটিই সঠিক কাজ। হয়তো এক সপ্তাহে রোগী কমে যাবে এবং কম সংক্রমণ হবে।’

তবে অনেকেই ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। ১৯ বছর বয়সী আলেকজান্ডার ভোরোটিলোভ বলেছেন, আমি এটি পছন্দ করছি না। এটি আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। আমি কিউআর-কোড ছাড়া বাইরে কোথাও যেতে পারছি না।

রাশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা মস্কোতে জনসাধারণের কার্যকলাপের জন্য এখনও টিকা নেওয়ার প্রমাণ দেখানোর দরকার হয় না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সপ্তাহব্যাপি শাটডাউন সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করবে কি-না তা বলা আগাম হয়ে যাবে। এটা কেবলমাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় ৮৮ লাখের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; তার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। দেশটিতে চলমান শরতে এই ভাইরাসের প্রকোপ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।

রাশিয়া স্পুটনিক-৫ সহ স্থানীয়ভাবে তৈরি বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত দেশটির মাত্র এক তৃতীয়াংশ মানুষকে পুরোপুরি টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থাকায় এখনও অনেকেই টিকা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।

দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মহামারির তীব্রতা নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ রয়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪ জন; যা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও পরিসংখ্যান সংস্থা রোসস্ট্যাট দেশটির সরকার করোনায় মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বাস্তবে সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বলে গত মাসে জানায়।

রোসস্ট্যাট বলছে, শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বরেই রাশিয়ায় করোনায় ৪৪ হাজার ২৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে; যা দেশটির সরকারের প্রকাশিত সংখ্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। দেশটিতে করোনায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্র: এএফপি।

এসএস