ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ব্যস্ত এলাকা রবীন্দ্রসদন এক্সাইড মোড়। রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সেখানেই ঘটেছে এক ভয়াবহ ঘটনা। রাস্তার ওপর এক যুবককে ফেলে তার বুকের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকল পুলিশ। কলকাতা পুলিশের এই কাজে স্তম্ভিত সবাই, তবে ক্ষমা চেয়েছেন সেখানকার কমিশনার।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় কলকাতায় এক যুবককে রাস্তায় ফেলে প্রথমে মারপিট করা হয়। তারপর তার বুকের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে এক পুলিশ সদস্য। সবুজ রঙের জামা পরিহিত ওই পুলিশ সদস্যটি পুলিশের ভাষায় সিভিক ভল্যান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ।

বেশ কিছুক্ষণ ওই অবস্থায় যুবককে রাস্তায় ফেলে রাখে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য। পাশে অন্য পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাকে বাধা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অনলাইন প্লাটফর্মে এই ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই ওই দৃশ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার তুলনা টেনেছেন। জর্জ ফ্লয়েড অবশ্য মারা গিয়েছিলেন। তবে কলকাতার বুকে ঘটা এই ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবক বেঁচে আছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, বুকের ওপরে বুট পরা পা দিয়ে ঠেসে ধরলেও রোগা চেহারার বছর কুড়ির সেই যুবক মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায়ই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন বার বার। আর মাটিতে শুইয়ে রাখতে বার বার বুকে-পিঠে লাথি মারছেন গ্রিন পুলিশ। বুট পায়ে ঠেসে ধরছেন ওই যুবককে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিতদের কয়েকজনই এই দৃশ্য ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। যার জেরে শুরু হয় সমালোচনার তীব্র ঝড়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র অবশ্য এই ঘটনায় বিব্রত। তার ভাষায়, ‘আমি বিব্রত। ঘটনার জন্য দুঃখিত। রাতেই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই সময়ে ওখানে ডিউটিতে থাকা ট্রাফিকের সকল কর্মকর্তাকে সোমবার সকালে আমার অফিসে ডেকে পাঠিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কী করে এই অমানবিক ঘটনা ঘটল, তা জানতে চাওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত হবে।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্যের নাম তন্ময় বিশ্বাস। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান রোববার সন্ধ্যায় এক্সাইড মোড় থেকে হাওড়াগামী একটি চলন্ত বাস থেকে এক নারীর ব্যাগ ছিনতাই করেছিলেন ওই যুবক। বাস থেকে নেমে পালাতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে মার খাচ্ছিলেন তিনি।

তার দাবি, তিনি প্রথমে ওই যুবককে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করেন। তখন ওই যুবক পালানোর চেষ্টা করতেই তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। সেই কারণেই ফুটপথে ফেলে পা দিয়ে ঠেসে ধরেছিলেন তিনি।

প্রশ্ন উঠেছে, যে অপরাধই ওই যুবক করুক না কেন, ধরা পড়ার পরে এমন অমানবিক ভাবে পা দিয়ে ঠেসে ধরে মারধর করতে হবে কেন? কেন তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হল না? তন্ময়ের যুক্তি, ‘সেই সময় ওই যুববকে সামলানো যাচ্ছিল না। নেশাগ্রস্ত ওই যুবকের গায়ে ভীষণ শক্তি। তাই বাধ্য হয়েই তার বুকে পা দিয়ে কোনো মতে আটকে রাখা হয়েছিল।’

স্থানীয় মানুষের অবশ্য অভিযোগ, তন্ময় রাস্তায় ফেলে মারছিলেন ওই যুবককে। পেটে বুকে পিঠে বুট দিয়ে লাথি মারার পরে তার বুকে পা তুলে দেওয়া হয়। ওই যুবক তখন বার বার ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু তন্ময় তাকে আটকে রাখেন।

স্থানীয় থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য, ওই যুবকের পকেট থেকে একটি চোরাই মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। যে নারীর ব্যাগ সে চুরি করেছিল, সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। মোবাইল বা ব্যাগের মালিক কেউই থানায় অভিযোগ জানাননি। তবে থানা চাইলে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

টিএম