দীপাবলির পরের সকালে খুসখুসে গলা, চোখে জল দিল্লিবাসীর
আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলি উৎসবের রাতে দেদার বাজি ফোটানোর খেসারত দিল্লিবাসী দেওয়া শুরু করেছে উৎসবের পরের দিন সকাল থেকেই। মারাত্মক বায়ুদূষণের ফলে শুকনো কাশি, গলা খুসখুস ও চোখে জ্বলাপোড়া নিয়ে ঘুম ভেঙেছে অধিকাংশ বাসিন্দার।
যানবাহন ও কলকারখানা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া, ধুলা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই দিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে ‘দূষিত বায়ুর রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃত।
বিজ্ঞাপন
তার ওপর দীপাবলি উপলক্ষ্যে রাজধানীজুড়ে বাজি ফোটানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া আরও ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে দূষণের মাত্রা। ধীরগতির বায়ুপ্রবাহের কারণে সেই ধোঁয়া রাজধানীর বাতাস ভারী করে তুলেছে কম্বলের মতো।
রাজধানীর বাতাসের মান পরীক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দিল্লির কয়েকটি এলাকায় বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার (পিএম) ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৯৯৯। যে যন্ত্রে পিএম এর ঘনত্ব মাপা হয় তাতে ৯৯৯-র বেশি ওঠেই না। যে কারণে, দিল্লির ওইসব এলাকার পিএম এর ঘনত্ব ৯৯৯ এর চেয়ে বেশি হতে পারে বলেই অনুমান অনেকের।
দিল্লির আরও কয়েকটি এলাকায় পিএম এর ঘনত্ব মিলেছে ৫০০-র কাছাকাছি বা তার চেয়ে বেশি। রোববার সন্ধ্যার পর পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হতে পারে বলে ধারণা বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থার। তবে তারপরও রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা ‘গুরুতর’ থেকে ‘খুব খারাপের’ মধ্যে ওঠানামা করবে।
পিএম যদি শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভালো’ বলা যায়। ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে থাকলে তাকে ধরা হয় ‘মোটামুটি গ্রহণযোগ্য’ হিসেবে।
গত বছর কৃষক আন্দোলনের সময় দিল্লির আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত কয়েক লাখ কৃষক যখন শীত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খড় বা ফসলের নোড়া পুড়িয়েছিল সে সময়ও বেড়ে গিয়েছিল পিএমের ঘণত্ব।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লির রাজ্য সরকার চলতি বছর বাজি বিক্রি ও পোড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, কিন্তু দিল্লির অধিকাংশ বাসিন্দা সেই নিষেধাজ্ঞা আমলে নেননি।
নভেম্বর থেকেই দিল্লিতে শীতের কুয়াশা দেখা যায়। বাজি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া বাতাসে আটকে থাকার কারণে অস্বাভাবিক রকম অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাতাস। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ঘণ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বাতাসের কারণে শুক্রবার দিল্লির বিভিন্ন হাইওয়েতে অন্তত ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশু ও নারীসহ বেশ কয়েকজন মানুষ।
অনেকেই দিল্লির ধোঁয়াশার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, ‘কিছুক্ষণ অন্তর জলে ভিজে যাচ্ছে চোখ। মাঝে মধ্যে গলা খুসখুস করে দমক আসছে কাশির। দেশের রাজধানীতে দীপাবলির পরের সকালটা এভাবেই কাটাচ্ছেন দিল্লিবাসী। এই দশা মোটেই উৎসব শেষের শোক নয়।’
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ/জেএস