জরায়ুমুখ ক্যানসার ৯০% কমায় এইচপিভি ভ্যাকসিন: গবেষণা
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি’র ভ্যাকসিন জরায়ুমুখ ক্যানসারের (সার্ভিক্যাল ক্যানসার) ঘটনা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস করে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষণা এবং সচেতনতাবিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্যানসার রিসার্চ ইউকে ওই গবেষণা পরিচালনা করেছে।
গবেষণার এই ফলকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে ক্যানসার রিসার্চ ইউকে বলেছে, গবেষণায় দেখা গেছে— এই ভ্যাকসিন জীবন বাঁচাচ্ছে। প্রায় সব ধরনের সার্ভিক্যাল ক্যানসার বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থেকে সৃষ্ট; টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ প্রায় নির্মূল হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
গবেষকরা বলেছেন, এই সফলতার অর্থ যাদের টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের জরায়ুর টিস্যুর পরীক্ষার প্রয়োজন অনেক কম হতো। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসের ওপর ভিত্তি করে ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী মেয়ে শিশুদের এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ছেলে শিশুদেরও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার ফল বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে। ইংল্যান্ডে ২০০৮ সালে মেয়ে শিশুদের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর কী ঘটেছে; সেটিই দেখেছেন গবেষকরা।
বর্তমানে ওই শিশুদের বয়স ২০-এর ঘরে। গবেষণায় দেখা যায়, ভ্যাকসিনের ফলে প্রাক-ক্যানসারের বৃদ্ধি এবং সার্ভিক্যাল ক্যানসার প্রায় ৮৭ শতাংশ কমে যায়। কিং কলেজ লন্ডনের গবেষক অধ্যাপক পিটার সাসিয়েনি বলেছেন, ‘টিকার এই প্রভাব বিশাল।’
যখন কিশোর-কিশোরীদের প্রচারণার অংশ হিসাবে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তখন প্রাক-ক্যানসার এবং সার্ভিক্যাল ক্যানসারের বৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে কম ছিল। এর কারণ, অল্পসংখ্যক কিশোর-কিশোরী টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং যৌনতায় সক্রিয় হওয়ার আগে তাদের এই টিকা দেওয়া হয়েছিল।
গবেষকদের এইচপিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে প্রায় সাড়ে ৪০০ ক্যানসার এবং ১৭ হাজার ২০০ প্রাক-ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
অধ্যাপক সাসিয়েনি বলেছেন, এটি ‘হিমশৈলের চূড়া’ মাত্র। কারণ যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ বয়স তখনও হয়নি। সময়ের সাথে সাথে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
গবেষণায় ইতিবাচক ফল মিললেও এইচপিভি টিকাদানের ব্যাপারে এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, টিকার এই সুরক্ষা কতদিন থাকবে সেটি নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে। এছাড়া মধ্যবর্তী বুস্টার ডোজের দরকার হবে কি-না সেটিও জানা যায়নি।
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের শতাধিক ধরন রয়েছে। যুক্তরাজ্য এই ভাইরাসের দু’টি ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু করেছে। এছাড়া দেশটি যৌনাঙ্গের আঁচিলের প্রধান কারণসহ ৯টি ভাইরাসের বিরুদ্ধে আরও একটি টিকার প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে।
ক্যানসার-সৃষ্টিকারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ধরনগুলো সংক্রামক কোষের ডিএনএতে বিপজ্জনক পরিবর্তন ঘটায়; যা পরবর্তীতে ক্যানসারে রূপ নেয়। আর এটি আক্রান্ত যে কোনও কোষের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
এসব ভাইরাস সাধারণত যৌন-বাহিত। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যৌন-সঙ্গম না ঘটলেও শুধু জেনিটাল বা যৌনাঙ্গ ও ওরাল বা মৌখিক— যে কোনও সংস্পর্শের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। মলদ্বার, লিঙ্গ এবং মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের সাথেও এসব ভাইরাসের সম্পর্ক আছে।
তবে ৯৯ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট। যে কারণে বিশ্বের শতাধিক দেশ জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু করেছে।
সূত্র: বিবিসি।
এসএস