বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল ভারতের কোভ্যাক্সিন
ভারতের হায়দরাবাদভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের তালিকায় ভারতের এই টিকাকে জায়গা দিয়েছে সংস্থাটি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ায় ভারতের এই টিকা এখন অন্যান্য দেশেও অনুমোদন পাবে। এছাড়া যেসব ভারতীয় এই টিকা নিয়েছেন বা নেবেন; তারা বিদেশ সফরে গেলে আর কোয়ারেন্টাইন পালন অথবা করোনার অন্যান্য বিধি-নিষেধের আওতায় পড়বেন না।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কোভ্যাক্সিনকে (ভারত বায়োটেকের তৈরি) জরুরি ব্যবহারের তালিকাভুক্ত করেছে ডব্লিউএইচও। এর ফলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ভ্যাকসিনের ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হলো কোভ্যাক্সিন।’
কার্যকারিতা ও মানের বিষয়ে দীর্ঘ এবং কঠোর পর্যালোচনার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেল ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন। হায়দরাবাদের এই প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি টিকার অনুমোদনের জন্য গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন করেছিল।
— World Health Organization (WHO) (@WHO) November 3, 2021
পরে জুলাই মাসে প্রয়োজনীয় ডেটা সরবরাহ করে ভারত বায়োটেক। দীর্ঘ এই সময়ে কোভ্যাক্সিনের সুরক্ষা, কার্যকারিতা এবং অ্যান্টিবডির স্থায়িত্বের পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন স্থাপনাও পর্যালোচনা করে ডব্লিউএইচও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় লাখ লাখ ভারতীয়— বিশেষ করে বিদেশগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, করোনায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবার এবং অন্যান্যরা ভোগান্তিতে পড়েন। ভারত বায়োটেকের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের অনুমোদন পাবে; এমন আশা-উদ্বেগে অপেক্ষা বাড়ে তাদের।
গত সপ্তাহে কোভ্যাক্সিনের ‘চূড়ান্ত ঝুঁকি-উপকারিতা মূল্যায়ন’র জন্য ভারত বায়োটেকের কাছে অতিরিক্ত তথ্য-উপাত্ত চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ। সেই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ডা. মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘চূড়ান্ত মূল্যায়নে কমিটি যদি সন্তুষ্ট হয়, তাহলে আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশের প্রত্যাশা করছি।’
ডব্লিউএইচও বলেছিল, ‘তারাও বুঝতে পেরেছে যে, কোভিড-১৯ টিকার জরুরি ব্যবহারের তালিকায় কোভ্যাক্সিনের অন্তর্ভুক্তির জন্য অনেক মানুষ অপেক্ষা করছেন। তবে জরুরি ব্যবহারের জন্য কোনও ভ্যাকসিন সুপারিশ করার আগে আমরা যাচাই-বাছাই বাদ দিতে পারি না। ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণের জন্য আমাদের অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।’
#Covaxin was found to have 78% efficacy against #COVID19 of any severity, 14 or more days after the second dose, and is extremely suitable for low- and middle-income countries due to easy storage requirements.
— World Health Organization (WHO) (@WHO) November 3, 2021
কোভ্যাক্সিনের অনুমোদনের পর এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক টুইট করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক টুইটে সংস্থাটি বলেছে, ১৪ অথবা তারও বেশি দিনের ব্যবধানে দুই ডোজ নেওয়া হলে কোভিড-১৯ এর যেকোনও ধরনের তীব্রতার বিরুদ্ধে কোভ্যাক্সিন প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর বলে নিশ্চিত হয়েছে ডব্লিউএইচও। সংরক্ষণের ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এই টিকা।
ভারতের স্থানীয়ভাবে তৈরি একমাত্র টিকা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেল কোভ্যাক্সিন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাদান কর্মসূচির মূলভিত্তি হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত কোভিশিল্ডের পাশাপাশি কোভ্যাক্সিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটিতে ১২ কোটি ১৪ লাখ মানুষকে কোভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে।
ভারত বায়োটেক বলছে, তাদের তৈরি টিকা উপসর্গযুক্ত করোনা প্রতিরোধে ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ কার্যকর। এছাড়া করোনার অতি-সংক্রামক ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে কোভ্যাক্সিন। হায়দরাবাদের এই কোম্পানি বলেছে, তারা কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ ধাপের পরীক্ষায় পাওয়া কার্যকারিতার তথ্য চূড়ান্ত বিশ্লেষণ শেষ করেছে।
কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না এবং চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
কোভ্যাক্সিনের গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে এক বছর: ভারত বায়োটেক
এদিকে, কোভ্যাক্সিনের গুণাগুণ অব্যবহৃত অবস্থায় ১ বছর পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে বলে বুধবার জানিয়েছে ভারত বায়োটেক। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) এ বিষয়ে একটি সনদপত্র ভারত বায়োটেককে দিয়েছে।
ভারত বায়োটেকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা টিকার মেয়াদ বিষয়ক তথ্যসমূহ সিডিএসসিও বরাবর জমা দিয়েছিলাম। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সিডিএসসিও এই সনদ দিয়েছে। সিডিএসসিওর সনদ অনুযায়ী, টিকা প্রস্তুতের দিন থেকে পরবর্তী ১২ মাস পর্যন্ত মেয়াদ ও গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে কোভ্যাক্সিনের।’
বর্তমানে বাজারে যেসব করোনা টিকা পাওয়া যায়, সেসবের অধিকাংশেরই মেয়াদ ৬ মাস। অর্থাৎ প্রস্তুতের দিন থেকে ৬ মাসের মধ্যে ব্যবহার না করা হলে নষ্ট হয়ে যায় সেসব টিকার ডোজ। এছাড়া ফাইজার-মডার্নার করোনা টিকা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ তাপমাত্রার। সেই তাপমাত্রায় রাখা না হলে এমনিতেই টিকার প্রতিরোধী গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে, সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই কোভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করা সম্ভব।
উৎপাদনের প্রথম দিকে অবশ্য অন্যান্য টিকার মতো ৬ মাস মেয়াদ ছিল কোভ্যাক্সিনেরও। তবে চলতি বছর গোড়ার দিকে টিকার মেয়াদ বাড়ানোর দিকে মনযোগ দেয় ভারত বায়োটেক। ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো যদি তাদের উৎপাদিত টিকার মেয়াদ বাড়ায়, সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে টিকার অপচয় অনেকাংশে কমে আসবে।
এসএস