জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হয়েছে; যেখানে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়েছেন। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি ব্রিটিশ পরিবেশমন্ত্রী অলোক শর্মা বলেছেন, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি হার দেড় ডিগ্রি বা তার নিচে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

‘ছয় বছর আগে প্যারিসে আমরা একটি যৌথ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম,’ ২০১৫ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চুক্তি হয়েছিল। সেখানে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চেষ্টার কথা বলা হয়েছিল।

তিনি বলেছেন, ‘এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নামিয়ে আনতে হলে কপ-২৬ হচ্ছে শেষ সুযোগ। তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, এই পরিকল্পনা যদি সফল না হয় তাহলে উষ্ণ তাপমাত্রায় পুরো পৃথিবী যেমন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, তেমনই সমুদ্র সীমা বেড়ে অনেক দেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা যে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে; সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের এবারের জলবায়ু সম্মেলনে নানান প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। রোববার থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। সম্মেলনে দুই শতাধিক দেশের কাছে কীভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে চান জানতে চাওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে সম্মেলনে। ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা। সেই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এখন সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ক্ষতির শিকার হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এর আগে, রোমে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চূড়ান্ত আলোচনার আগে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেছিলেন, বিশ্ব নেতাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে। না হলে পরে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

তিনি একে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস এই সম্মেলনকে ‘শেষ ও চূড়ান্ত সুযোগ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তিনি।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল, যতটা সম্ভব কম গাছ কাটা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষকে রক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর লক্ষ্য পূরণের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দরিদ্র দেশগুলো।

তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করেছিল ধনী দেশগুলো। কিন্তু এ জন্য যে অর্থ প্রয়োজন ছিল, এই ধনী দেশগুলো তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিবিসি বাংলা।

এসএস