চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেল মার্ক মিলি। তিনি এই চীনা মিসাইল পরীক্ষাকে স্পুটনিক মোমেন্টের সঙ্গেও তুলনা করেন। যেটি কার্যত গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করেছিল।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, মার্ক মিলি হলেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ’র চেয়ারম্যান। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের প্রথম সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যিনি তিনিই প্রথম চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার কথা স্বীকার করলেন।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গ টিভি’কে তিনি বলেছেন, ‘হাইপারসনিক অস্ত্রপরীক্ষার ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই চিন্তার বিষয়। গত শতাব্দীর শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন স্পুটনিক মহাকাশে পাঠিয়েছিল, এটিও তেমনই ঘটনা কি না তা আমার জানা নেই। তবে তার খুব কাছাকাছি ঘটনা তো বটেই।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক মহাকাশে পাঠায়। এ ঘটনায় সেসময় যুক্তরাষ্ট্র অবাক হয়ে যায়। ওয়াশিংটনের তখন ভয় ছিল, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ও প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দেবে রাশিয়া।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত জুলাইতে চীন হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা করেছে। এটি পৃথিবীকে চক্কর দিয়ে আবার বিশ্বের আবহমণ্ডলে ঢোকে। হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের থেকে পাঁচগুণ বেশি গতিতে যায়। ফলে তা রাডারে ধরা শক্ত এবং তার মোকাবিলা করা কঠিন।
ভবিষ্যত যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অস্ত্র মারাত্মক হয়ে উঠতে বাধ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন। তবে ওয়াশিংটনও হাইপারসনিক অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চীন যে পর্যায়ে সফল হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ততদূর পৌঁছাতে পারেনি।
মার্ক মিলি বলেছেন, ‘প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাই বিষয়টি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।’
চীন অবশ্য বলেছে, তারা কোনো অস্ত্র পরীক্ষা করেনি। তারা একটি মহাকাশযানের পরীক্ষা করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু শক্তির দ্রুত আধুনিকায়নকে যারা সমর্থন করেন, তারা চীনের এই সাম্প্রতিক পরীক্ষাকে দেশটির ‘স্পুটনিক মুহূর্ত’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। ১৯৫০ এর শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন মহাকাশের কক্ষপথে সফলভাবে তাদের উপগ্রহ পাঠায়, তখন সোভিয়েত সাফল্যে এ ধরনের বিস্ময় ও শঙ্কা প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞ তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। তারা মনে করেন না যে চীনের এই সাম্প্রতিক পরীক্ষা নতুন করে কোনো হুমকি সৃষ্টি করেছে। কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশানাল পিস’র জেমস অ্যাকটন বলছেন, অন্তত ১৯৮০-র দশক থেকে আমেরিকা মনে করে তারা চীনের দিক থেকে পারমাণবিক হামলার হুমকিতে রয়েছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
টিএম