সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও গৃহবন্দি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি জান্তা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের জীবনে এই প্রথম কোনো সামরিক আদালতে সাক্ষ্য দিলেন তিনি।

এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে জান্তা গঠিত বিশেষ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সুচি।

চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।

অভ্যুত্থানের পর গৃহবন্দি সুচির বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। মামলাগুলো যেসব অভিযোগে করা হয়েছে, সেসব হলো- রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়মবহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্যসংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় গাফিলতি।

গত জুন থেকে রাজধানী নেইপিদোর বিশেষ সামরিক আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার সুচি তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো একটি মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছে আদালত সূত্র। তবে কোন মামলায় তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা আদালত লিখিত আকারে প্রকাশের আগ পর্যন্ত জানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সূত্র।

আগামী সপ্তাহে আদালত এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বিষয়ক বিবরণী লিখিত আকারে প্রকাশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সুচির বিচার চলাকালে আদালতে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি আগেই নিষিদ্ধ করেছিল জান্তা। সম্প্রতি সুচির পক্ষের আইনজীবীদেরও সংবাদমাধ্যমে কথা বলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার ১৪ বছর পর, ১৯৬২ সালে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান হয় মিয়ানমারে। তারপর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ৫২ বছর সামরিক শাসনাধীনে ছিল দেশটি।

২০১৫ সালে পরিবর্তিত সংবিধানের অধীনে মিয়ানমারে নির্বাচন ঘোষণা করে জান্তা। তাতে সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসন পায়।

কিন্তু তার ৫ বছর পর, ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে এনএলডির ভূমিধস জয় সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে। কারণ, মিয়ানমারের সংবিধানে দেশটির পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বরাদ্দ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সামরিক বাহিনী; কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি।

অবশেষে ২০২১ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অভুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় ক্ষমতায় আসীন হয় জান্তা। দেশটির সেনা প্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।

এসএমডব্লিউ