টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয় উদযাপন করায় ভারত-শাসিত কাশ্মিরের দু’টি মেডিকেল কলেজের শত শত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ভারতের কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী একটি আইনে কাশ্মির পুলিশ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছে বলে মঙ্গলবার খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

রোববার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চিরবৈরী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। বহুল আলোচিত এই ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের বিশাল জয় পায় পাকিস্তান। ম্যাচ হেরে যাওয়ায় দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় পাঞ্জাবে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ভারতীয় ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট দলের মুসলিম খেলোয়াড় মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের বাজে মন্তব্য করা হয়।

হিমালয় উপত্যকার কাশ্মিরে ভারত-বিরোধী মনোভাব গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যুগের পর যুগ ধরে ব্যাপক বিতর্কিত এই ভূখণ্ডকে প্রতিবেশি দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে। যদিও ভারত এবং পাকিস্তান পৃথক দুই কাশ্মিরকে শাসন করে আসছে।

ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে ১৯৯০ এর দশকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত অথবা স্বাধীন কাশ্মিরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

এমন দৃশ্যপটে ভারত-পাকিস্তানের যেকোনও ধরনের ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে কাশ্মির উপত্যকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেখানকার বাসিন্দারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে রাজনৈতিক বিবৃতিও দেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম জয়ের পর রোববার বিতর্কিত এই অঞ্চলে একই ধরনের উদযাপন দেখা যায়। পাকিস্তানের বিজয়ে সেখানকার শীর্ষস্থানীয় দু’টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উল্লাস করেন।

পাকিস্তানের জয়ের পর শ্রীনগরের সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং শের-ই-কাশ্মির ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের শিক্ষার্থীরা তাদের হোস্টেলের বাইরে আনন্দ মিছিল করেন। তাদের উদযাপনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।

মঙ্গলবার কাশ্মির পুলিশের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা আলজাজিরাকে বলেছেন, ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন ভারতের জাতীয় অনুভূতির অবমাননার দায়ে কাশ্মিরের অজ্ঞাত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে প্রথম এফআইআরে এখন পর্যন্ত ওই দুই মেডিক্যাল কলেজের কোনও শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশ্মিরের একজন মানবাধিকার আইনজীবী আলজাজিরাকে বলেছেন, ক্রিকেট ম্যাচে জয়ের পর পাকিস্তান জিন্দাবাদ (পাকিস্তান দীর্ঘজীবি হোক) স্লোগান দেওয়া বেআইনি নয়। আদালত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই মামলা শেষ পর্যন্ত ছুড়ে ফেলবেন। কিন্তু ইউএপিএ আইনের অধীনে মামলায় জামিন পাওয়া কার্যত অসম্ভব।

‘এটি একেবারে অপরিপক্ক, সংবেদনশীল এবং কঠোর একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন। শুধুমাত্র উদযাপনের কারণে অতি-উৎসাহী হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর  চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এসএস