ছোট্ট এই শিশুটিকে মাত্র ৫০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন এক আফগান দম্পতি

আফগানিস্তানে ক্ষুধার জ্বালায় নিজেদের মেয়ে শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছেন এক দম্পতি। খাবারের আশায় মাত্র ৫০০ মার্কিন ডলারে সন্তানকে বিক্রি করেন তারা। সোমবার (২৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এই ভূখণ্ডটিতে। এমনকি দেশটিতে প্রতিদিনই এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

নিজের মেয়ে শিশু সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়া নারী বলছেন, ‘আমার অন্য সন্তানরা ক্ষুধার জ্বালায় মারা যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আমার মেয়েকে বিক্রি করতে হয়েছে। মেয়েকে বিক্রির প্রয়োজন না হলে খুবই ভালো হতো।’

ছোট্ট ওই শিশুটির বাবা আবর্জনা সংগ্রহ করতেন এবং সেই আয় দিয়েই সংসার চালাতেন। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই উপার্জনও বন্ধ। তিনি বলছেন, ‘আমরা না খেয়ে আছি। ঘরে কোনো আটা বা তেল নেই। ঘরে খাওয়ার মতো কিছুই নেই।’

বাবা-মা দরিদ্র হোক বা ধনী; সন্তান সব সময় তাদের হাতেই নিরাপদ। তবে বাবা-মায়ের ছায়া থেকে সরিয়ে ছোট্ট মেয়ে শিশুকে বিক্রি করে দেওয়ায় তার (শিশুর) ভাগ্যে এখন কি রয়েছে; এমন প্রশ্নের জবাবে শিশুর বাবা জানান, ‘আমার মেয়ে জানে না তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে তার কেমন লাগবে। কিন্তু আমাকে এটি (সন্তানকে বিক্রি) করতে হলো।’

আফগানিস্তানের হেরাতের মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারস হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিবিসি’র ইয়োগিতা লিমায়ে। তিনি বলছেন, ছোট্ট ওই শিশুটি হাঁটতে শুরু করলেই তাকে নিয়ে অন্যত্র চলে যাবেন কিনে নেওয়া ব্যক্তিটি।’

ওই শিশুর বাবা-মা জানিয়েছেন, ‘শিশুটিকে কিনে নেওয়া ব্যক্তিটি ইতোমধ্যেই ৫০০ ডলারের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ তাদেরকে পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা আগামী কয়েক মাসে হাতে পাওয়া যাবে। তিনি (ক্রেতা ব্যক্তিটি) জানিয়েছেন, মেয়ে শিশুটি বড় হলে তার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবেন। কিন্তু সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত নয়।’

উল্লেখ্য, পশ্চিমা-বিশ্ব সমর্থিত ক্ষমতাসীন সরকারের পতন এবং কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর গভীর সঙ্কটে পড়েছে আফগানিস্তান। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে।

গত শনিবার সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী পার ওলসন ফ্রিদ সতর্ক করে বলেছেন, আফগানিস্তান অর্থনৈতিক পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; যা দেশটিকে নতুন রাজনৈতিক সংকটে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রেডক্রস বলেছে, দাতব্য গোষ্ঠীগুলো তাদের সহায়তার মাধ্যমে আফগানিস্তান সমস্যার সাময়িক সমাধান করতে পারে।

এছাড়া জাতিসংঘও জানিয়েছে, আফগানিস্তানে জরুরি ভিত্তিতে ও দ্রুত সহায়তা পৌঁছানো না হলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের কারণে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

টিএম