যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস-সহ ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত দূতের নোটিস জারি করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে সোমবার (২৫ অক্টোবর) নিজের সেই অবস্থান থেকে সামান্য সরে এসেছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূতদের বিষয়ে ইতোপূর্বে বলা ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ কথাটি সরিয়ে নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে পারসোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে- তাকে সে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। সাধারণত এই নোটিশ জারি করা হলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত নিজে থেকেই নিজ দেশে ফিরে যান।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও বলেছিলেন, দশ দেশের রাষ্ট্রদূত তুরস্কে অবাঞ্ছিত। কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করেছিলেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের পর ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরে যেতে বলা হবে। কিন্তু সোমবার এরদোয়ান জানিয়েছেন, আপাতত ওই রাষ্ট্রদূতদের ফিরে যেতে হবে না। তাদের ওপর জারি করা নোটিশ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, কেন নিজের অবস্থান বদল করলেন এরদোয়ান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নিজে বলেছেন, ওই ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত নিজেদের অবস্থান বদল করেছেন। সে কারণেই তিনি কিছুটা নরম হয়েছেন।

তুরস্কের দাবি, ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত একটি নতুন বিবৃতি জারি করেছেন। সেখানে তারা বলেছেন, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে চান না। বস্তুত, আন্তর্জাতিক কূটনীতির নীতি অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্রদূত সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন না। ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত তা স্বীকার করেছেন। এরপরেই বরফ কিছুটা গলেছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের প্রশাসন।

রাষ্ট্রদূতদের ওই বিবৃতির পরেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পারসোনা নন গ্রাটা-র নোটিশ তুলে নেন বলে জানানো হয়েছে।

কূটনীতিকদের বক্তব্য, ওই নোটিশ জারি রাখলে ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরতে হতো। যা তুরস্কের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক কার্যত তলানিতে নিয়ে যেত। এমনিতেই তুরস্কের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হচ্ছে।

তার মধ্যে এরদোয়ান এ কাজ করলে কার্যত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হতো বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও তা আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই সামান্য হলেও নরম হয়েছেন বলে কূটনীতিকদের মত। অন্যদিকে, ১০টি দেশও প্রকাশ্যে সংঘাতের রাস্তায় যেতে চায়নি। তাই নতুন বিবৃতি জারি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, তুরস্কের কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি রয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ওসমান কাভালা। তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি জারি করেছিলেন ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূত। তারপরেই বিতর্কের শুরু হয়।

২০১৩ সালে দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অর্থায়ন এবং ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে সংশ্লিষ্টতার দায়ে গত চার বছর ধরে কারাবন্দি আছেন কাভালা। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই মানবাধিকার কর্মী।

গত ১৮ অক্টোবর এক যৌথ বিবৃতিতে কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা কাভালার মামলার ন্যায়বিচার, দ্রুত সমাধান এবং ‘জরুরি মুক্তি’র আহ্বান জানান। পরে এই বিবৃতিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে অভিহিত করে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের তলব করে।

তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এসকিসেহির শহরে দেওয়া এক বক্তৃতায় এরদোয়ান বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় আদেশ দিয়েছি এবং বলেছি কী করতে হবে। এই ১০ রাষ্ট্রদূতকে অবশ্যই একেবারে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করতে হবে। আপনি এটি দ্রুত করবেন।’

তার এই বক্তৃতার সময় উপস্থিত জনতা উল্লাস প্রকাশ করেন। এ সময় এরদোয়ান বলেন, তুরস্ককে তাদের জানতে এবং বুঝতে হবে। যেদিন তারা তুরস্ককে জানবে না এবং বুঝবে না, সেদিন তারা চলে যাবেন।

তবে উভয়পক্ষ কিছুটা ছাড় দেওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

টিএম