তিউনিসিয়ায় একটি হাসপাতালে করোনা রোগীকে সেবা দিচ্ছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী

করোনাভাইরাস মহামারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে এবং এর কারণে বিশ্বজুড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়ে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া বিশ্বের আরও দেশে ও নতুন নতুন অঞ্চলে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে উদ্বেগ, ক্লান্তি-অবসাদ এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসের বিষয়েও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সংস্থাটি।

ডব্লিউএইচও’র প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলছেন, করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। একইসঙ্গে টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রে অসমতা ও অস্বচ্ছতারও সমালোচনা করেন তিনি।

টেড্রোস বলেন, ‘বিশ্বের ১১৯টি দেশ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গড়ে ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে দু’জনকে সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।’

এছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব মৃত্যুকে মর্মান্তিক ক্ষতি বলে আখ্যায়িত করে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত করোনা মহামারি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে ডব্লিউএইচও। এই সময়কালে বিশ্বব্যাপী করোনায় মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুকে বিপর্যয়কর ক্ষতি উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের (প্রাণ হারানো এসব স্বাস্থ্যকর্মীর) না থাকা অপূরণীয় ক্ষতি। ধারণা করা হয়, বিশ্বজুড়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন।

এর আগে অবশ্য ডব্লিউএইচও’র আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে, ভ্যাকসিনের অভাবে চলমান এই মহামারি আগামী বছর পর্যন্ত ভালোভাবেই টিকে থাকবে।

জাতিসংঘভিত্তিক এই সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডা. ব্রুস আইলওয়ার্ড এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জানিয়েছেন, এখনও বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ করোনা টিকার কোনো ডোজ পায়নি। টিকার ডোজের মজুত না থাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি- এমন দেশের সংখ্যাও কম নয়।

তার ভাষায়, ‘বিশ্বজুড়ে টিকাবণ্টনের যে বর্তমান চিত্র- তাতে খুব সহজেই বোঝা যায়, ২০২২ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে করোনা নির্মূল হবে না।’

উন্নত দেশগুলোতে যেখানে গড়ে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, সেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন ৫ শতাংশেরও কম মানুষ।

এদিকে শুক্রবার সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৪ কোটি ৩২ লাখ। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার।

টিএম