‘উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নিপীড়ন চালাচ্ছে চীন’
চীনের সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কীভাবে জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন এবং দমন অভিযান পরিচালনা করছে, সে বিষয়ে নতুন এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। উইঘুর দমন-পীড়নে দেশটির বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূমিকার বিষয়ে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
৮২ পৃষ্ঠার ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উইঘুরদের সংস্কৃতি, পরিচয় এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং দমনের জন্য চীন পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা জারি রেখেছে বলে জানানো হয়। এএসপিআইয়ের এই গবেষণা উইঘুর অধ্যুষিত চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় ধরনের দলিল প্রমাণের সর্বশেষ খতিয়ান।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনটিতে পূর্বের অপ্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র যেমন— স্থানীয় ভাষার উৎস, পুলিশি রেকর্ড এবং বাজেটের নথি চীনের সরকারি ওয়েবসাইটগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের দিকে প্রথমে ব্যাপকভাবে উইঘুরদের শিবিরে বন্দি রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। জিনজিয়াংয়ে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
উইঘুরদের নৃশংস নিপীড়নের ব্যাপারে চীনা সরকারের প্রক্রিয়া এবং প্রধান হোতাদের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি এএসপিআই। তবে অল্প কিছু সরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিনজিয়াংয়ে দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছে অস্ট্রেলীয় এই সংস্থা।
প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ে দমন-পীড়নে দেশটির সরকার এবং সমাজের সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দমনমূলক চীনা নীতির সাথে জড়িত বেশ কয়েকটি অফিস এবং কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেছে এএসপিআই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের ফরেস্ট্রি ব্যুরোর মতো অপরিচিত সংস্থা; যারা কাশগর শহরের পুনঃশিক্ষা শিবির এক বছরের জন্য দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেছে।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যদের একটি আন্তঃদলীয় জোট জিনজিয়াংয়ের উইঘুর এবং অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় জরুরি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ে চীনা নিপীড়নের ব্যাপারে বলা হয়, গত বছর উইঘুর ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে চীনের ক্ষমতাসীন সরকার।মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো হলো— যথেচ্ছভাবে তাদের আটক ও বন্দিশিবিরে পাঠানো, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, শ্রমদানে বাধ্য করা এবং ধর্মপালন, মতপ্রকাশ ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জিনজিয়াং প্রদেশে চীন প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের আটকে রেখেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা। চীনের মূলধারার হান জনগোষ্ঠীকে জিনজিয়াংয়ের কিছু এলাকায় বসবাসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে।
সূত্র: এএনআই।
এসএস