টানা তৃতীয় দিনে সৌদি জোটের হামলায় ইয়েমেনে শতাধিক নিহত
ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলের মারিব প্রদেশে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলায় টানা তৃতীয় দিনের মতো হুথি বিদ্রোহীদের শতাধিক সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার সৌদি জোটের এক বিবৃতিতে বিমান হামলায় হুথিদের এই প্রাণহানি ঘটেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সৌদি জোট বলেছে, বুধবার মারিবের আবদিয়া জেলায় জোটের বিমান হামলায় ইরান-সমর্থিত হুথিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১০৮ ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে, সোমবার একই প্রদেশে সৌদি জোটের বিমান হামলায় ১৫৬ এবং মঙ্গলবার ১৩৪ জন নিহত হয়।
বিজ্ঞাপন
চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে মারিবে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিমান হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ৪০০ জনে পৌঁছেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই অঞ্চল দখলে হুথি বিদ্রোহীরা তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
শিয়াপন্থী হুথিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ব্যাপকভাবে বিমান হামলার ওপর নির্ভরশীল। তবে প্রাণহানির এই পরিসংখ্যান কীভাবে তৈরি করা হয়েছে সেবিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি সৌদি জোট। ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিও নিরপেক্ষভাবে প্রাণহানির তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
সৌদি আরবের সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল আল-আখবারিয়ায় জোটের বিবৃতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় আবদিয়া জেলায় হুথি মিলিশিয়া সদস্যদের লক্ষ্য করে ১৯টি অভিযান পরিচালনা করেছি। এই অভিযানে ১০৮ হুথি সদস্যের প্রাণহানি এবং তাদের ১২টি সামরিক যান ধ্বংস করা হয়েছে।
তেল সমৃদ্ধ উত্তর ইয়েমেনের মারিব শহর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি। গত মাসে এই প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য হুথি বিদ্রোহীরা নতুন করে অভিযান শুরু করায় সেখানে সংঘাতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় হুথিরা বলেছে, তারা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ইয়েমেন এবং ওই অঞ্চলবিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডাম ব্যারন বলেছেন, বিদ্রোহীরা উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক অগ্রগতি লাভ করেছে।
এএফপিকে তিনি বলেন, এসব অগ্রগতি কৌশলগত এবং মনস্তাত্ত্বিক— উভয় দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এক অথবা দুই বছর আগেও এসব এলাকাকে বেশ নিরাপদ হিসাবে দেখা হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে একবার মারিব দখলে অভিযান চালিয়েছিল হুথিরা, কিন্তু সেবার বিপুলসংখ্যক যোদ্ধার প্রাণহানি হওয়ায় কয়েকমাস স্থগিত ছিল তাদের সেই শহর দখল অভিযান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মারিবে অভ্যন্তরীণ বাস্ত্যুচুত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এই মানুষরাই নতুন সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
কিন্তু এই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ খাদ্য ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকটে ভুগছেন।
সূত্র: এএফপি।
এসএস