অন্তর্ভুক্তি সরকার মেনে নেব, নির্বাচন নয়: সোহেল শাহিন
সরকার ও মন্ত্রিসভায় দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে পূর্বের ‘অনড়’ অবস্থান থেকে সরে আসতে সম্মত আছে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। কিন্তু কোনোভাবেই সরকার গঠনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয় তাদের কাছে।
তালেবানগোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতা ও বর্তমান আফগান সরকারের অন্যতম মুখপাত্র সোহেল শাহিন বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের জনগণ সরকারব্যবস্থা ও মন্ত্রিসভায় দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করতে প্রস্তুত আছে। এক সময় সরকারে নারীদেরও যুক্ত করা হবে।’
বিজ্ঞাপন
‘কিন্তু নির্বাচনভিত্তিক সরকার কখনও জনগণ মেনে নেবে না; এবং বিশ্বকে অবশ্যই আফগান জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করতে হবে।’
এমন এক সময়ে তালেবান মুখপাত্র এ মন্তব্য করলেন- যখন একদিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে দেশ পরিচালনার কাজে পদে পদে বাধার মুখোমুখী হচ্ছে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার, অন্যদিকে দিন দিন তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগানিস্তান শাখা আইএস খোরাসান (আইএসকে)।
২০২০ সালের মার্কিন প্রশাসন ও তালেবানগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল দোহা চুক্তি। তার শর্ত অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিলে আফগনিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাইডেন এই ঘোষণা দেওয়ার একমাস পর থেকে আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করে তালেবান বাহিনী এবং মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সবগুলো প্রদেশ দখলের পর গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান গোষ্ঠী।
তার দুসপ্তাহ পর একটি নতুন মন্ত্রিসভাও গঠন করে তারা; কিন্তু ২০২০ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি সংলাপে পাশ্চাত্য দেশসমূহের প্রতিনিধিদের ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান প্রতিনিধি দল, তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি নবগঠিত মন্ত্রিসভায়। সেখানকার সব সদস্যই হয় তালেবান, নয়তো তাদের সহযোগী হাক্কানি নেটওয়ার্ক বা অন্যান্য গোষ্ঠীর প্রতিনিধি।
স্বাভাবিকভাবেই এই মন্ত্রিসভা গঠনে হতাশ হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ফলে, ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়টি ঝুলে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে আফগান সরকারের যে গচ্ছিত অর্থ ছিল, তা ও আটকে যায়।
ফলে, বহুলাংশে বিদেশি সাহায্যনির্ভর আফগান অর্থনীতি প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছে সম্প্রতি। খাদ্য, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ভয়াবহ সংকট চলছে দেশটিতে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আফগানিস্তানের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন।
পাশাপাশি, আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ ও তালেবানগোষ্ঠীর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের আফগানিস্তান শাখা আইএসকে। দেশটিতে তালেবানগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এক পর্যন্ত কয়েকটি ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে আইএসকে।
তার মধ্যে সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে শুক্রবার। আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কুন্দুজে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম উপজাতি হাজারাদের একটি মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের ঘটে, এবং তাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অন্তত ৫০ জন।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে তদবির করতে বৃহস্পতিবার দোহায় পৌঁছেছে তালেবানদের একটি প্রতিনিধিদল। সেই দলের সদস্য হিসেবে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন সোহেল শাহীন।
আজ শনিবার থেকে এই বৈঠক শুরু হবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জিাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এসএমডব্লিউ