গত ১৫ আগস্ট তালেবান বাহিনী কাবুল দখলের পরের দিন, ১৬ আগস্ট থেকে আফগানিস্তান ত্যাগের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয় কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ওই দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু হৃদয়বিদারক ঘটনার দৃশ্য ইন্টারনেটের বদৌলতে দেখেছে বিশ্ববাসী।

এমনই একটি দৃশ্য ছিল বিমানবন্দরের কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে একটি শিশুকে তোলার দৃশ্য। সেখানে দেখা যায়, বিমানবন্দরের দেয়ালের নিচে ভিড় করে আছেন একদল আফগান, তাদের মধ্যে একজন একটি শিশুকে ওপরের দিকে তুলে ধরেছেন; এবং দেয়ালের ওপর কাঁটাতারের বেড়ার অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে একজন মার্কিন সেনা হাত বাড়িয়ে সেই শিশুটিকে তুলে নিয়েছেন।

ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিচিত্র ইতোমধ্যে দেখেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।

সাদা রঙের পোষাক পরা সেই শিশুটিকে যখন কাঁটাতারে বেড়ার ওপর দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল, তখন কাঁদছিল সে; আর তার নিচে চলছিল ব্যাপক হইচই-চিৎকার চেঁচামেচি। তবে যেই মার্কিন সেনা শিশুটির বাবার হাত থেকে তাকে গ্রহণ করেছিলেন, তিনি তার গায়ে কোনো আঁচ লাগতে দেননি।

শিশুটির বাবার নাম হামিদ। তিনি আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সেনাবাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন। তালেবান বাহিনী কাবুল দখলের পর দেশটি ত্যাগে ইচ্ছুক আফগানদের ভিড়-হুড়োহুড়িতে নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

হামিদ জানান, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তার স্ত্রী লিয়া কন্যাসন্তানের জন্ম দেন; তালেবান বাহিনীর প্রতিশোধ থেকে নিজে এবং পরিবারের সদস্যদে রক্ষার জন্য আগস্টের আগে থেকেই কাজপত্র প্রস্তুতসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় কন্যার জন্মের সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে হামিদ জানান, সব কাগজপত্র ও আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর সপরিবারে আফগানিস্তান ত্যাগের জন্য গত ১৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন স্ত্রী সন্তানসহ বিমানবন্দরে আসেন তিনি এবং কিছু জরুরি কাজের জন্য বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেন।

এ সময় হামিদ লক্ষ্য করেন, বিমানবন্দরে অতিরিক্ত মানুষের চাপে তার স্ত্রী লিয়া ও শিশুকন্যা ব্যাপক কোনঠাসা অবস্থায় পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগু-পিছু কোনো কিছু চিন্তা না করে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের শিশুকে নিয়ে ওপরের দিকে তুলে ধরেন এবং দেওয়ালের বেড়ার অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মেরিন সেনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ডেইলি মেইলকে হামিদ বলেন, ‘প্রথমে ওই মেরিন সেনা বলেছিলেন, যে তিনি একমাত্র যা করতে পারেন তা হলো বেড়ার ওপর দিয়ে শিশুটিকে তুলে নেওয়া, কিন্তু এতে শিশুটি আঘাত পেতে পারে। উত্তরে আমি বললাম- সে যদি কিছুটা আঘাত পেয়ে বেঁচে যায় তাহলেও আমি নিশ্চিন্ত থাকব; কারণ আফগানিস্তানে তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ।’

প্রায় ৫ বছর আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন হামিদ। ডেইলি মেইলকে তিনি বলেন, যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে না আসেনন, সেক্ষেত্রে ‘বেঈমান’ হিসেবে তালেবান বাহিনী তাকে হত্যা করবে- এমন একটি নিশ্চিত সংবাদ পেয়েছিলেন তিনি।’

‘নিজের মেয়ে কে যখন আমি ওপরের দিকে তুলে ধরছিলাম, তখন আমার মনে শুধু একটা চিন্তাই কাজ করছিল- আমি একজন মেরিন সেনার হাতে আমার কন্যাকে তুলে দিচ্ছি এবং এখন তার জীবন নিরাপদ।’

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্স শহরে বসবাস করছেন হামিদ-লিয়া দম্পতি।

ডেইলি মেইলকে এই দম্পতি জানিয়েছেন, তাদের মেয়ের বয়স এখন আট সপ্তাহ। মার্কিন মেরির সেনাবাহিনীর ওই সদস্যের প্রতি সম্মানার্থে নিজের মেয়ের নাম মেরিন রেখেছেন এই হামিদ-লিয়া।

এসএমডব্লিউ