করোনায় বিশ্বজুড়ে বেড়েছে স্ট্রোক, হৃদযন্ত্রের সমস্যা
শ্বাসতন্ত্রের প্রাণঘাতী রোগ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে এরই মধ্যে মারা গেছেন অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও হৃদযন্ত্র ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয় এই রোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রথম ১২ মাস পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হৃদযন্ত্রের ছোট-বড় নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন লোকজন।
বিজ্ঞাপন
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন – এমন রোগীদের ৩৯ শতাংশই এই ঝুঁকিতে আছেন। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়েছেন- এমন রোগীদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারন মানুষের তুলনায় ৫ দশমিক ৮গুণ পর্যন্ত বেশি থাকে।
হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক ছাড়াও করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর হৃদযন্ত্রের আরও দু’টি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া করোনা রোগীদের। সেগুলো হলো- হৃদপিণ্ডের পেশীর প্রদাহ (মায়োকার্ডিটি) এবং হৃদপিণ্ডের বহিরাবরণ বা ঝিল্লির প্রদাহ (পেরিকার্ডিটি)।
গবেষণায় জানা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় এই রোগীদের মায়োকার্ডিটি ও পেরিকার্ডিটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ১৪ গুণ বেশি।
আরও জানা গেছে, গত বছর মাহামারি শুরুর পরে থেকে এ পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ জন মানুষ।
মিসৌরিভিত্তিক এই গবেষক দলের প্রধান এবং সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সার্ভিসের মহামারি বিদ্যা বিভাগের পরিচালক জিয়াদ আল আলী এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস মানবদেহের কী পরিমাণ ক্ষতিসাধন করে এই গবেষণায় তার কিছু চিত্র পাওয়া গেছে।’
‘ইদানিং বিভিন্ন দেশে লং কোভিড নামে এক প্রকার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্যগত জটিলতার বিষয়টিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলোর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। আমি উদ্বিগ্ন, যে আমরা এখনও এই বিপদ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হয়ে উঠছি না।’
কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের রোগ করোনার সঙ্গে হৃদযন্ত্রের সমস্যা কীভাবে সম্পর্কিত তা এখনও অস্পষ্ট বলে জানিয়েছেন জিয়াদ আল আলী। ব্লুমবার্গকে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারটি এখনও আমাদের কাছে অস্পষ্ট। যদি করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় রোগীরা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় পড়তেন, সেক্ষেত্রে তার ব্যাখ্যা দেওয়া কিছুটা সহজ হতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, করোনা রোগীরা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় পড়ছেন রোগটি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর।’
‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাস যখন ফুসফুসে অবস্থান ও বংশবিস্তার করে সে সময় ফুসফুসের কোষগুলো ধ্বংসের পাশাপাশি হৃদপিণ্ডের পেশী, ধমণী ও শিরাসমূহের গুরুতর ক্ষতি করে। করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় তা বোঝা যায় না, কিন্তু এই রোগটি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তা টের পাওয়া যায়।’
‘তাছাড়া, করোনাকালীন আইসোলেশন, আর্থিক ও মানসিক চাপ, আতঙ্ক, হতাশা, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কার্যক্রমে পরিবর্তন- এসব কারণেও বাড়ে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
এসএমডব্লিউ