প্রত্যন্ত এলাকায় ড্রোনে টিকা পাঠাচ্ছে ভারত
দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় করোনা টিকার ডোজ পাঠাতে ড্রোন ব্যবহার করছে ভারত। দেশটির সরকারি চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) প্রধান ড: সিমরান পাণ্ডা বিবিসিকে এই তথ্য জানয়েছেন।
বিবিসিকে ড: সিমরান পাণ্ডা বলেছেন, ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে টিকা পাঠানোর জন্য ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করাও শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিষ্ণুপুর থেকে মনিপুরের কারাং দ্বীপের একটি ক্লিনিকে প্রথমবারের মতো ড্রোনের মাধ্যমে টিকার চালান পাঠানো হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন ড: সিমরান পাণ্ডা।
সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ অধ্যুষিত কারাং দ্বীপকে ঘিরে আছে ২৪০ বর্গকিলোমিটারের একটি হ্রদ। বিষ্ণুপুর থেকে সড়ক ও জলপথে কারাংয়ে পৌঁছাতে সময় লাগে চার ঘণ্টারও বেশি সময়।
কিন্তু ড্রোনের মাধ্যমে মাত্র ১২ মিনিটে প্রত্যন্ত এই দ্বীপটিতে টিকার চালান পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন আইসিএমআরের প্রধান নির্বাহী।
প্রথম এই অভিযানটি সফল হওয়ায় মনিপুর-নাগাল্যান্ডের মতে পার্বত্য রাজ্যগুলোর প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকাসমূহে এখন থেকে ড্রোনের মাধ্যমেই টিকার চালান পাঠনো হবে বলে জানিয়েছেন ড: পাণ্ডা। এর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান-নিকোবরে টিকার ডোজ পাঠানোর জন্য ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিবিসিকে ড: সিমরান পাণ্ডা বলেন, ‘আমরা দেশের এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে টিকাদান ও টিকার ডোজ পাঠানোর ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, এসব অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো এখনও যথেষ্ট উন্নত নয় এবং সংক্রমণ যদি একবার ছড়িয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে ওইসব এলাকার খুব কমসংখ্যক মানুষ আইসিইউ বা মেডিকেল অক্সিজেনের মতো চিকিৎসা সুবিধা নেওয়ার মতো অবস্থা আছে।’
‘এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলসমূহে টিকাদানের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এই প্রকল্পে যে ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হবে, সেগুলো সর্বোচ্চ সাড়ে চার কেজি বা ৯০০ ডোজ টিকা পরিবহনে সক্ষম বলে উল্লেখ করেছেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসুচি শুরু করেছে ভারত। সেই থেকে এ পর্যন্ত কর্মসূচিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ৯৭ কোটিরও বেশি টিকার ডোজ।
মূলত তিনটি করোনা টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতের টিকাদান কর্মসূচিতে- অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড, ভারতীয় ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিন এবং রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুতনিক ৫।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ করোনা টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এসএমডব্লিউ