প্যান্ডোরা পেপার্সে পুতিনের বান্ধবীর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের তথ্য
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যেমন ক্ষমতাধর তিনি তেমন তার সম্পদের পরিমাণও। অবশ্য এর বেশিরভাগই ঘনিষ্ঠজনদের নামে। এবার সন্ধান মিলেছে ইউরোপের দেশ মোনাকোতে আছে পুতিনের এক বান্ধবীর বিলাসবহুল ফ্ল্যাট।
রোববার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। সাম্প্রতিক আর্থিক দলিলপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিশ্বের বড় বড় নেতা, রাজনীতিবিদ, ধনকুবেরসহ বিভিন্ন দেরেশর সরকারি কর্মকর্তাদের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্যান্ডোরা পেপার্স নামে এসব দলিলপত্রে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রনেতা এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্যান্ডোরা পেপার্স অনুযায়ী, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজনদের গোপন সম্পদ রয়েছে মোনাকোতে। এমনকি পুতিনের প্রেমিকা এবং রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
রোববারের প্রতিবেদনে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদের কাছে কর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের দেশ মোনাকোতে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি গোপন লেনদেন হয়েছিল। সেসময় সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের হাতবদল হয়। স্থানীয় একটি নোটারির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করা ওই চুক্তিতে অ্যাপার্টমেন্টটি হাতবদল হয় ৩৬ লাখ ইউরোতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৬ কোটি টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী, এই বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মোনাকোর মন্টে কার্লো স্টার কমপ্লেক্স নামক বিলাসবহুল ভবনের চতুর্থ তলায় একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন ক্রেতা। ফ্ল্যাটের সঙ্গে ছিল পার্কিংয়ের দু’টি স্পেস, একটি স্টোররুম এবং সুইমিং পুল ব্যবহারের সুযোগ।
বিলাসবহুল এই ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে নতুন মালিক মোনাকোর মনোমুগ্ধকর সৈকত দেখতে পারেন। এছাড়া ওই কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর যে, কোনো ভ্রমণকারী চাইলেই সেখানে প্রবেশ বা ভবনের বাসিন্দাদের বিরক্ত করতে পারেন না। কমপ্লেক্সের ছাদে একটি মিনি গার্ডেন বা ছোট বাগানও রয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ২০০৩ সালে ওই ফ্ল্যাটটি যিনি কিনেছিলেন, তার পরিচয় কারও জানা ছিল না। ক্রেতা ছিলেন একজন রহস্যময় ব্যক্তি। আনুষ্ঠানিক নথিপত্রে ওই ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবে নাম ছিল ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জে নিবন্ধিত একটি অফশোর কোম্পানির। যার নাম ব্রুকভিল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
তবে সম্প্রতি প্রকাশিত প্যান্ডোরা পেপার্সে রহস্যময় ওই ফ্ল্যাটমালিকের পরিচয় বেরিয়ে এসেছে। প্যান্ডোরা পেপার্সের নথি বিশ্লেষণ করে বিলাসবহুল ওই ফ্ল্যাটটির ক্রেতা হিসেবে একজন নারীকে শনাক্ত করেছে গার্ডিয়ান। তার নাম এসভেতলানা ক্রিভোনোগিখ। ২০০৩ সালে ফ্ল্যাটটি কেনার সময় তার বয়স ছিল ২৮ বছর। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রুশ এই নারী বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
ক্রিভোনোগিখের নামে তার শহর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে সম্পদ ও ইয়ট ছাড়াও আরও অনেক সম্পদও ছিল। এসব সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ১০ কোটি মার্কিন ডলার।
এত সম্পদের মালিক হলেও এসভেতলানা ক্রিভোনোগিখের অতীত ছিল খুব সাধারণ। তিনি একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক ভবনে বাস করতেন। সেসময় তাকে পাঁচটি পরিবারের সঙ্গে রান্নার জায়গা ও বাথরুম ভাগাভাগি করে কাজ করতে হতো।
তবে ৯০-এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়রের সঙ্গে বন্ধুত্বের পরই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় ক্রিভোনোগিখের। সেই মেয়র আর কেউ নন, ভ্লাদিমির পুতিন। চলতি শতাব্দীর শুরুতে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার আগে নব্বইয়ের দশকে পুতিন ছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়র। এসভেতলানা ক্রিভোনোগিখ পুতিনের প্রেমিকা ছিলেন বলেও শোনা যায়।
২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর তিন বছর পরে ক্রিভোনোগিখ একটি সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম- এলিজাবেটা অথবা লুইজা। প্রোয়েক্ট নামে রাশিয়ার একটি স্বাধীন অনুসন্ধানী ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ক্রিভোনোগিখের এই সন্তানের বাবা ভ্লাদিমির পুতিন।
টিএম/জেএস