মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই ভবানীপুরই দেশের পথ দেখাবে। ‘বি মানে ভবানীপুর, বি মানে ভারত’। প্রত্যাশামতো ভবানীপুরের উপনির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী মমতা। ব্যবধান ৫৮ হাজারের বেশি ভোট। তাহলে এবার কি টার্গেট ২০২৪? তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব এবার সেই বার্তাই দিচ্ছেন। দেশটির রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই বিশাল ব্যবধানে মমতার জয় দিল্লি যাত্রার ক্ষেত্র ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই প্রচারও সামনে আনবে তৃণমূল।

ভবানীপুরের উপনির্বাচনের এই জয় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নানা দিক থেকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। দেশটিররাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমত নন্দীগ্রামের হারের জ্বালা কিছুটা হলেও মিটবে। যদিও নন্দীগ্রামের পরাজয়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন তৃণমূলনেত্রী। দ্বিতীয়ত, বিধায়ক না হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। অতএব এই জয় খুবই জরুরি ছিল তার কাছে।

এছাড়া উপনির্বাচন হলেও বিজেপির সদ্য নিযুক্ত রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এই উপনির্বাচনের প্রচারে। তা যে কোনও কাজেই এল না সেটি রোববারের ফলাফল প্রমাণ করে দিল। সর্বোপরি তৃণমূলের দিল্লি অভিযানের ডাকে এই জয় সহায়ক হবে বলেই মনে করছে দেশটির রাজনৈতিক মহল।

এই উপনির্বাচন এবং বাকি দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জের ভোটে তৃণমূলের প্রচারে সর্বভারতীয় রাজনীতি যথেষ্ট প্রাধান্য পেয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী তো সরাসরি ভবানীপুর থেকে ভারত জয়ের ডাক দিয়েছিলেন। দলের দ্বিতীয় সেনাপতি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোদির দিকে নিশানা করেছেন।

এমনকি কংগ্রেস নয়; তৃণমূল কংগ্রেসই পারে বিজেপিকে হারাতে সেকথা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন তিন কেন্দ্রের ভোটারদের। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের তিন কেন্দ্রের ভোট হলেও তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল দিল্লি। জয় নিয়ে তারা ভাবেননি ২০২৪ যে তাদের লক্ষ্য সেকথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস ইতোমধ্যে ত্রিপুরায় পা দিয়ে সাড়া ফেলেছে। সেখানে অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগদান চলছে। গোয়ায় কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীসহ একঝাঁক কংগ্রেস নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কন্যা সাবেক সাংসদ সুস্মিতা দেবকে দলে এনে তৃণমূল কংগ্রেসে রাজ্যসভায় সাংসদ করেছে। আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে সংগঠন বিস্তারের কাজে লেগে পড়েছেন সুস্মিতা।

পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে আদালতে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করা বিশিষ্ট আইনজীবী কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলকে নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। ভবানীপুরের এই জয়ের পর তৃণমূলের মনোবল যে আরও বেড়ে গেল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

সারা দেশে মোদিবিরোধী মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে ধরছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভবানীপুর কেন্দ্রে অবাঙালি ভোটারও যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন একটি ‘মিনি ভারত’-এ মমতার বিপুল জয় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্বও হিসেব কষে বলছে, অবাঙালি বুথেও তৃণমূল ব্যাপক লিড পেয়েছে। একদিকে তৃণমূলের জয়, অন্যদিকে বিজেপির বিপুল ব্যবধানে পরাজয়। এই ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস দিল্লি যাত্রায় বাড়তি মাত্রা যোগ করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এসএস