ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ ধরে রাখার জন্য সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রাজ্যটির দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আসন থেকে উপনির্বাচনে লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেত্রী। নির্বাচনে মমতার বিপরীতে রয়েছেন বিজেপির প্রার্থী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার সকালে নির্ধারিত সময়েই ভবানীপুরের শতভাগ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ওই আসনের সকল ভোট কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মাইক্রো অবজারভার স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীও দায়িত্বপালন করছে ভবানীপুরের ভোট কেন্দ্রগুলোতে। একইসঙ্গে সকাল থেকেই ওই অসনের বিভিন্ন বুথে ঘুরছেন পুলিশ পর্যবেক্ষকরাও।

গোটা রাজ্যের নজর এখন ভবানীপুরের দিকে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়েছে এই বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। রাজ্যের আরও দু’টি আসন— শমসেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরেও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিধানসভা ভোট। কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ বা জঙ্গিপুর ধারেকাছে নেই ভবানীপুরের।

দক্ষিণ কলকাতার এই আসনই ঠিক করে দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভবিষ্যৎ। ১০ বছর আগে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর এই বিধানসভা আসন থেকেই জিতে প্রথম বিধানসভায় গিয়েছিলেন মমতা। তার আগে মমতা লোকসভার সাংসদ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে মমতা যে জিতবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের কোনো সংশয় নেই। কিন্তু তৃণমূল তথা মমতার কাছে এই লড়াই আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধানের কারণে। বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মমতার জন্যই তিনি কেন্দ্রটি ছেড়ে দিয়েছেন।

শোভনদেবের জয়ের ব্যবধান ছিল ২৭ হাজারের কিছু বেশি। এই উপনির্বাচনে মমতার জয়ের ব্যবধান তার চেয়েও বেশি রাখতে চায় তৃণমূল। তবে পাশাপাশি তাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে, উপনির্বাচনে এমনিতেই ভোট কম পড়ে। ভোট কম পড়লে জয়ের ব্যবধানও কম হবে। ফলে দিনের শেষ কত ভোট পড়ল, সেদিকেও নজর থাকবে শাসক এবং বিরোধী শিবিরের।

মমতার বিরুদ্ধে ভবানীপুরে বিজেপি প্রার্থী করেছে আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে। সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসও পেশায় আইনজীবী। সব মিলিয়ে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই উপনির্বাচনে। শমসেরগঞ্জে প্রার্থীর সংখ্যা সাত, জঙ্গিপুরে নয় জন।

উল্লেখ্য, গত মার্চ এবং এপ্রিল মাসে আট দফায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ২ মে ফল প্রকাশ হয়। মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯২ আসনের মধ্যে ২১৩টিতে জিতে বিপুল ভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসে। কিন্তু নন্দীগ্রামে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান মমতা।

এরপর গত ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয় বারের জন্য শপথ নেন মমতা। তবে মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তাকে জিতে আসতে হবে বিধানসভায়। সেই কারণেই ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে লড়ছেন  ‘ঘরের মেয়ে’।

টিএম/এনএফ