বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তির খেতাব এখন জাপানের কেন তানাকার। ১১৮ বছর বয়সেও তারুণ্যদীপ্ত আছেন তিনি

মানুষ চাইলে ১৩০ বছর এমনকি তারও বেশি বাঁচতে পারে। মানুষ আসলে কতদিন বেঁচে থাকতে পারে তার সময়সীমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক থাকলেও নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তাত্ত্বিক দিক থেকে মানুষের বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ কোনো সীমা নেই।

বুধবার ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষ সম্ভবত কমপক্ষে ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে এর বেশিও বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এমন অতি বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।

মানুষের জীবিত থাকার সীমা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। তবে নতুন এই গবেষণায় বলা হয়েছে, আমরা কিছু ক্ষেত্রে ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারি অথবা মানুষের সর্বোচ্চ তাত্ত্বিক বয়সসীমা নেই।

রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা শতবর্ষী মানুষের নতুন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ায় নতুন বিতর্কও শুরু হয়েছে। শতবর্ষী অর্থাৎ যাদের বয়স ১১০ অথবা তারও বেশি এবং ১০৫ অথবা তারও বেশিদের নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে।

মানুষের জীবদ্দশায় সাধারণত মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পেলেও গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেই ঝুঁকি প্রায় সমান অর্থাৎ ৫০-৫০। লুসানে সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (ইপিএফএল) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্থনি ডেভিসনের নেতৃত্বে ওই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ১১০ বছরের পরও কেউ আরেক বছর বাঁচার কথা চিন্তা করতে পারেন। ডেভিসন বলেন, এটি যদি আপনার মাথায় আসে, তাহলে আপনি পরবর্তী জন্মদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারেন। কিন্তু যদি তা না হয়, তাহলে পরবর্তী বছরের কোনো এক সময়ে আপনি মারা যাবেন।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা ধারণা করছেন, মানুষ অন্তত ১৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু গবেষণার পূর্বানুমানের ভিত্তিতে গবেষকরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, মানুষের জীবনকালের কোনো সীমা নেই। ডেভিসন বলেছেন, কিন্তু এই গবেষণা সিদ্ধান্তগুলোকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে এবং সেগুলোকে আরও সুনির্দিষ্ট করে তোলে। কারণ এ বিষয়ে এখন তথ্য আরও বেশি সহজলভ্য।

গবেষকরা প্রথম দফায় দীর্ঘায়ু সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ডেটাবেস থেকে বিশ্বের ১৩টি দেশের ১০৫ এবং ১১০ বছরেরও বেশি বয়সী এক হাজার ১০০ জনের বেশি পুরুষ ও নারীসহ বিভিন্ন বয়সীদের গত ৬০ বছরের আয়ুষ্কাল বিশ্লেষণ করে এসব সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। দ্বিতীয় দফায় ইতালি থেকে ১০৫ বছরের বেশি বয়সীদের বেছে নেওয়া হয়; যাদের বয়স ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০৫ এর ওপরে ছিল।

বিদ্যমান ডেটা থেকেও গবেষণা কাজটির পূর্বানুমান করা হয়েছে। ডেভিসন বলেছেন, এটি গবেষণার একটি যৌক্তিক পদ্ধতি। ডেভিসন বলেন, অতি বৃদ্ধদের নিয়ে যে কোনো গবেষণায়, সেটি পরিসংখ্যানগত অথবা মানুষের জীবন যাপনের প্রক্রিয়াও হতে পারে, পূর্বানুমান থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, যদি ১৩০ বছরের নিচে সীমা থাকে; তাহলে বর্তমানে সহজলভ্য ডেটা ব্যবহার করে এটি আমাদের শনাক্ত করতে হবে। তবুও যেহেতু মানুষ তাত্ত্বিকভাবে ১৩০ বা তার বেশি বয়সেও পৌঁছাতে পারে, তার মানে এই নয় যে— আমরা যে কোনো সময় এটি দেখতে পাব।

বিশ্লেষণটি এমন মানুষদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যারা ইতোমধ্যে শত বছর পেরোনোর বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এবং ১১০ বছর বয়সেও ১৩০ বছরে পৌঁছানোর সুযোগ প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে পান প্রায় একজন...। আর এটি একেবারে অসম্ভব নয়। তবে অত্যন্ত বিরল— বলছেন গবেষক দলের প্রধান অ্যান্থনি ডেভিসন।

তিনি বলেন, চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত সামাজিক সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে এত বয়সে পৌঁছানোর সম্ভাবনা খুব কম। গবেষণায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিদিন বেঁচে থাকার রেকর্ড ফরাসী নারী জেন কালমেন্তে বলে জানানো হয়েছে; যিনি ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে মারা যান।

যদিও তার প্রকৃত বয়স নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকেই কালমেন্তের বয়সের দাবি নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে নথিপত্র পর্যালোচনায় তার বয়সের সত্যতা মেলে।

এই সময়ে প্রবীণ ব্যক্তির সিংহাসনের জন্য অন্য ভানকারীদের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। কারণ যাচাই-বাছাইয়ের পর বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তির খেতাব এখন জাপানের কেন তানাকার। ১১৮ বছর বয়সেও এখনও তুলনামূলক তারুণ্যদীপ্ত আছেন তিনি।

সূত্র: এএফপি।

এসএস/জেএস