দিল্লির দাঙ্গা পূর্ব-পরিকল্পিত: হাই কোর্ট
গত বছর ৫৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হঠাৎ করেই হয়নি এবং এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে ‘পূর্ব-পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’র অংশ ছিল। সোমবার দিল্লি হাই কোর্ট গত বছরের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন।
হাই কোর্টের বিচারপতি দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশের একজন হেড কনস্টেবলের মৃত্যুর মামলার বিষয়ে আদেশ দেওয়ার সময় বিচারপতি সুব্রাহ্মনিয়াম প্রসাদ তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি কনস্টেবলের মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত একজনের জামিন মঞ্জুর করেন এবং অন্যজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী এবং সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাত চরম আকার ধারণ করে উত্তরপূর্ব দিল্লিতে। প্রথম দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে ধর্মীয় মানদণ্ডের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
এই আইনের বিরোধিতায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হলেও তা সহিংস হয়ে ওঠে দিল্লিতে। দিল্লিতে সহিংসতায় কমপক্ষে ৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটে; যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এছাড়া এতে আহত হয় আরও শত শত মানুষ।
দিল্লি হাই কোর্ট বলেছেন, সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজে বিক্ষোভকারীদের আচরণে কার্যত সরকারের কাজকর্ম বিঘ্নিত করার পাশাপাশি শহরের মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করার প্রচেষ্টা দেখা গেছে।
দাঙ্গাবাজরা শহরের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে বিচারপতি সুব্রাহ্মনিয়াম প্রসাদ বলেছেন, এই কাজের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত যে, শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দাঙ্গা ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। তিনি বলেন, এটিও পরিষ্কার, অসংখ্য দাঙ্গাবাজ লাঠি, ব্যাট ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিল।
বিশেষ এই মামলায় দিল্লি পুলিশ এফআইআরে বলেছে, একদল সহিংস জনতা গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি লাঠি, বেইসবল ব্যাট, লোহার রড এবং পাথর নিয়ে উত্তরপূর্ব দিল্লির ওয়াজিরাবাদ এলাকার প্রধান সড়কে জমায়েত হয়েছিল। এফআইআরে বলা হয়, জনতা সহিংস হয়ে ওঠায় পুলিশ বলপ্রয়োগ করে এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দেয়।
সংঘর্ষে দিল্লি পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লাল, শাহদারা জেলা পুলিশের উপ-কমিশনার এবং গোকুলপুরী পুলিশ স্টেশনের সহকারী কমিশনার আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকৎসকরা রতন লালকে মৃত ঘোষণা করেন।
দিল্লি হাই কোর্টের ওই বিচারপতি বলেন, অভিযুক্তদের একজন মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তরবারি বহন করতে দেখা গেছে। তবে অন্য আসামি মোহাম্মদ সেলিম খানকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর দিল্লির হাই কোর্ট কনস্টেবল রতন লাল হত্যা মামলায় দু’জনকে অব্যাহতি এবং অন্য দু’জনের জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।
সূত্র: স্ক্রল ডট ইন।
এসএস