মেরকেলের উত্তরসূরী নির্বাচনে আজ ভোট দেবেন জার্মানরা
জার্মানিতে রোববার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিদায় নিচ্ছেন ইউরোপের কুইনখ্যাত জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। রোববারের এই নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। মধ্য-বামপন্থি দল এসডিপি’র কাছে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে মেরকেলের দল। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। অবশ্য নির্বাচনের পর পরবর্তী সরকার গঠিত হওয়া পর্যন্ত মেরকেল দায়িত্বপালন করবেন। রোববারের এই নির্বাচনের মাধ্যমে জার্মানিতে কার্যত একটি যুগের অবসান হবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটির নতুন নেতা নির্বাচনে রোববার ভোট দেবেন জার্মানরা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে মেরকেলের বিদায়ের পর তার বিকল্প হওয়ার স্বপ্ন থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে হচ্ছে তার পছন্দের আরমিন লাশেটকে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে টেলিভিশন বিতর্কে বাকি দুই প্রার্থীর কাছে তিনি কার্যত কোণঠাসা হয়ে গেছেন।
নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে তৃতীয় ও শেষ ত্রিপাক্ষিক টিভি বিতর্কেও মানুষের মন জয় করতে পারেননি মেরকেলের রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী আরমিন লাশেট। জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, তিনটি বিতর্কেই সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের প্রার্থী ওলাশ শলৎস জয়ী হয়েছেন। আর তাই রোববারের এই নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে উঠছে।
তৃতীয় দফার বিতর্কের পর জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছিল, বর্তমানে যে অবস্থা ২৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের দিনেও ভোটাররা একই মনোভাব দেখালে এসপিডির নেতৃত্বেই জার্মানির নতুন সরকার গঠিত হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচনের আগে উঠে আসা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশের পরবর্তী চ্যান্সেলর হিসেবে ৪২ শতাংশ মানুষ ওলাশ শলৎসকে সমর্থন দিলেও তার দল এসপিডির পক্ষে সমর্থন রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে বামপন্থি দল ডি লিংকে বা উদারপন্থি এফডিপিকে তৃতীয় শরিক করতে হবে। ফলে জোট সরকার গঠনের আলোচনা দীর্ঘ হতে পারে।
এদিকে ভোটকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতির পসরা সাজিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনে জয়লাভ করলে সামাজিক-রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে নতুন সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে ইতোমধ্যে সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে দলগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আয়কর, নাগরিকদের অবসরকালীন ভাতা, অভিবাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামাজিক সুরক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জার্মানির তুলনামূলক রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাসীন সিডিউ ও তার সহযোগী সিএসইউ ভোটারদেরকে নিজেদের ঘরে টানতে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব একটি বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে চায় তারা। আকাশপথের যাত্রায় সিনথেটিক জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথাও বলেছেন দলটির নেতারা।
এছাড়া কর ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে জার্মানির বিভিন্ন এলাকায় ১৫ লাখেরও বেশি নতুন ঘর বানানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দলটির নেতারা। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের ওপর ধার্য করা কর কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দলটি।
অন্যদিকে ভোটারদের মন জয় করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামপন্থি দল এসপিডিও। পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার কৌশল হিসেবে সামনের বছরগুলোতে অন্তত ১৫ মিলিয়ন ইলেকট্রিক গাড়ি বাজারে আনতে চায় তারা। এছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সর্বোচ্চ গতিসীমা ১৩০ কিলোমিটার করতে চায় এসপিডি।
ক্ষমতায় গেলে অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করে বরং বেশি মাত্রায় আশ্রয়প্রার্থীদের পরিবারকে জার্মানিতে আসার সুযোগ দিতে চায় এ দলটি। একইসঙ্গে অবসরকালীন ভাতাকে মানানসই অবস্থানে রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এসপিডি।
অবসরে যাওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬৭ বছরই রাখতে চান দলটির নেতারা। এছাড়া বামপন্থি এ দলটি ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১২ ইউরো করার ঘোষণা দিয়েছে।
টিএম