সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভারতের বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে খোঁচার জবাব দিয়ে দেশটিতে তোলপাড় ফেলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে। শুক্রবার ইমরান খানের কাশ্মির নিয়ে খোঁচার জবাবে তোপ দাগেন স্নেহা দুবে। ইমরান খানের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যের পর তিনি দেশটির গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসা ভাসছেন।

কে এই স্নেহা?

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ায় জন্ম স্নেহা দুবের। প্রাথমিক পড়াশোনা সেখানেই। পরবর্তীতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমফিল করেন তিনি। মাত্র ১২ বছর বয়সেই পররাষ্ট্র সার্ভিসে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির প্রতি তার আগ্রহ জন্মায়।

২০১১ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হন। স্নেহার বাবা একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন। মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা। পরিবারে স্নেহাই প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পান তিনি।

ইমরান খানের খোঁচার জবাবে যা বলেছেন স্নেহা দুবে

শুক্রবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিজেপি শাসিত ভারতকে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম জনগণের জন্য ‘ভীতিপ্রদ’ স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন। ইমরান খান বলেন, ‘বর্তমানে ইসলামভীতির সবচেয়ে ব্যাপক ও নিকৃষ্ট রূপটি আমরা ভারতে দেখতে পাচ্ছি।’

‘ভারতে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি-আরএসএস যেভাবে বিদ্বেষপূর্ণ হিন্দুত্ববাদ ছড়াচ্ছে, তা দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং দেশটির অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগণের মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে।’

নিজ বক্তব্যে কাশ্মিরের প্রসঙ্গ টানেন পাক প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান সংশোধনের করে কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন বাতিলে মাধ্যমে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যটির জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইমরান আরও অভিযোগ করেন, ভারতের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে ভারত।

২০১১ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হন। ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পান তিনি।

পাকিস্তান অবশ্য বরাবরই ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য দেয় ভারত অনেক সময় সেসব অগ্রাহ্য করে এবং জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে এবার ইমরানের বক্তব্যের শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে ভারতের দূত এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে।

জাতিসংঘে পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে স্নেহা বলেন, ‘পাকিস্তান হলো এমন একটি দেশ যারা নিজেরা আগুন লাগায় এবং তারপর আবার নিজেরাই দমকলকর্মী হয়ে সেই আগুন নেভাতে আসে।’

‘এই দেশটি বরাবরই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় এবং লালন-পালন করে আসছে শুধুমাত্র একটি আশায়- জঙ্গি ও উগ্রপন্থিরা যেন প্রতিবেশী দেশসমূহে নাশকতা চালানোর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

বিজেপি শাসনামলে ভারতের মুসলিমরা আতঙ্কে আছে বলে যে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান, তা খণ্ডন করে স্নেহা দুবে বলেন, ‘পাকিস্তান তার নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী পরিমাণ নিপীড়নমূলক আচরণ করে, তা সবাই জানে। তাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।’

স্নেহা দুবে বলেন, ‘ভারত একটি বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক দেশ এবং ভারত সরকারের অনেক উচ্চপদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কাজ করছেন, যা পাকিস্তানে কল্পনাও করা যায় না।’

কাশ্মীর প্রসঙ্গে বক্তব্যের পর ভারতের ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তুলোধনা করেন। স্নেহা বলেন, পাকিস্তান জাতিসংঘে ভারতের সম্পর্কে ভুল তথ্য বলে এর অপব্যবহার করছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির জন্য ভারত নয়, পাকিস্তানকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।

স্নেহার বাবা একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতেন। মা স্কুলের শিক্ষিকা। পরিবারে স্নেহাই প্রথম সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

ইমরানের বক্তব্যের জবাবে রাইট টু রিপ্লাইতে পাকিস্তান আর সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরে ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জঙ্গি সংগঠনকে অতিথি হিসেবে দেশে রাখার রেকর্ড রয়েছে পাকিস্তানের। কয়েকদিন আগে ৯/১১ হামলার ২০তম বছর ছিল। বিশ্ব ভোলেনি এই হামলার প্রধান ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে আশ্রয় পেয়েছিল। এমনকি এখনও সেই দেশে লাদেনকে শহিদ হিসেবে গৌরবান্বিত করা হয়।

সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন স্নেহা

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের বক্তব্যের জবাব দেওয়ার পর ভারতে সামাজিক যোগােযোগমাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইছে স্নেহার। ইমরান খানের বক্তব্যের জবাব দেওয়ায় অনেকেই তার প্রশংসা করছেন, সাথে জুড়ে দিয়েছেন তার বক্তব্যের ভিডিও।

যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে তরুণ কর্মকর্তা হিসেবে ইমরান খানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন তার প্রশংসা করে ভারতীয় এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, কী চমৎকারভাবে পাকিস্তানের জোকারদের মুখ বন্ধ করেছেন! প্রত্যেকটি শব্দ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বেছে নিয়েছেন। একেবারে পূর্ণাঙ্গ ঘটনা তুলে ধরেছেন... এক কথায় চমৎকার।

ক্রুশনা নামে অপর একজন লিখেছেন, তিনি কি মেধাবী নন? আমি বিমোহিত। তরুণ এই বন্দুক এত ভালোভাবে কাজ করছে দেখে খুশি লাগছে।

এসএস