মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যে সাক্ষাৎ ও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, তার বিরোধিতা করে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল আন্দোলনকর্মী।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের সামনের লাফায়েত স্কয়্যার পার্কে তারা বিক্ষোভ করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

বিক্ষোভকারীদের প্রায় সবার হাতেই ছিল ‘ভারতকে ফ্যাসিবাদ থেকে রক্ষা করো’ লেখা প্ল্যাকার্ড। লাফায়েত স্কয়্যারে তারা সবাই মোদির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

পাশপাশি ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘণ, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন, নতুন কৃষি আইন এবং কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন বাতিলের জন্য নরেন্দ্রা মোদি ও তার রাজনৈতিক দল বিজেপিকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

চার দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা জোট কোয়াডের (কোয়াড্রিলাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ) বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তবে কোয়াডের বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি।

চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ হচ্ছে বাইডেনের। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুসমূহের পাশাপাশি করোনা মহামারি মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো উঠে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলতি ‍সপ্তাহের শুরুর দিকে বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছিলেন, ‘দুই নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কোয়াডের বৈঠককে আরও গতিশীল এবং তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলবে। কারণ যে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে, তার অনেগুলো কোয়াড বৈঠকের আলোচ্যসূচিতেও রয়েছে।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের বাইরে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীরা আল জাজিরাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন। যদি তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন-ে সেক্ষেত্রে এটি প্রতিশ্রুতিবিরুদ্ধ কাজ হবে; কারণ, বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য- মানবাধিকারের প্রতি মোদি এবং তার দল বিজেপির কোনো প্রকার সম্মান বা শ্রদ্ধা নেই।

প্রসঙ্গত, গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালে জো বাইডেন এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও সেখানে জরুরি অবস্থা জারি, আসামে নাগরিকত্ব বিল কার্যকরের পদক্ষেপ ও মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব আইন এবং দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।

ভিক্টর বেগ নামে ৭৪ বছর বয়সী এক কমিউনিটি নেতা ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটনে এসেছেন বিক্ষোভে যোগ দিতে। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘মোদি যেসব নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন, সেগুলো হোয়াইট হাউসের মূল্যবোধবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রে তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া এবং হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তার অর্থ হলো- আমাদের গণতন্ত্র আপোসকামী হয়ে উঠছে।’

ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলীও ছিলেন বিক্ষোভে। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি- ধীরগতিতে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে। ভারতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিমের জীবন প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের এই বিক্ষোভ ভারতের প্রতি একটি কঠোর বার্তা।’

আইনী সহায়তাদানকারী অলাভজনক সংস্থা জাস্টিস ফর অল এর কর্মী ফারহানা কারা মোতালা বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভে এসেছেন কাশ্মিরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিপীড়ণমূলক নীতির প্রতিবাদ জানাতে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমি মনে করি, এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নীরব দর্শক হয়ে চুপচাপ বসে থাকা উচিত নয়।’

২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল নরেন্দ্র মোদির ওপর। ওই দাঙ্গায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন এবং সে সময় গুজরাটের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, গুজরাটের দাঙ্গা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও নরেন্দ্র মোদি এ ব্যাপারে সব জেনেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক অর্জুন শেঠিও এসেছিলেন লাফায়েত পার্কে বিক্ষোভে অংশ নিতে। তিনি এসেছিলেন দেশটিতে চলমান কৃষক আন্দোলনে বিজেপির ভূমিকার নিন্দা জানাতে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘তারা (কৃষক) শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার ও ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে আন্দোলন করছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে তারা কী পেল? কেবলমাত্র অবহেলা আর নির্যাতন।’

‘আমরা যারা এখানে উপস্থিত, আমদের সবার উদ্দেশ্য একটাই- আমরা সবাই ভারতের সংখ্যালঘু, দলিত, নারী, কৃষক, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’

সূত্র : আল জাজিরা

এসএমডব্লিউ