প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাদুড়ের দেহ থেকেই মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে বলে মনে করছেন কম্বোডিয়ার বিশেষজ্ঞরা। বার্তাসংস্থা রয়টার্স সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি হর্সশু প্রজাতির দুটি বাদুড়ের দেহে সার্স কোভ ২ বা নভেল করোনাভাইরাসের সমধর্মী ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে কম্বোডিয়ার রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা পাস্তুর ডি কম্বোজ (আইপিসি)।

এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা প্রজাতির বাদুড় সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইপিসির সমন্বয়ক থেভরি হোয়েম।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই গবেষণার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ও কোভিড-১৯ সম্পর্কে বিশ্বের উপলব্ধি ও জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ হবে।’

আইপিসির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. বিসনা ডুয়ং এ সম্পর্কে বলেন, ইতোমধ্যে তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস বা তার সমধর্মী ভাইরাসগুলো বাদুড়ের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিন্তু যখন মানুষের দেহে এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়, তখন সেটি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

তবে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য বাদুড়ের চেয়ে মানুষই বেশিমাত্রায় দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত শিকার ও বনাঞ্চল ধ্বংসের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে মানুষ। যার ফলে প্রাণীজগত থেকে বিভিন্ন রোগ সংক্রমিত হচ্ছে মানবদেহে। প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করলে হয়তো আমরা বর্তমান মহামারি এড়াতে পারতাম।’

কম্বোডিয়ার এই গবেষণার অর্থ যোগাচ্ছে ফ্রান্স। করোনার উৎস অনুসন্ধানে বন্যপ্রানীর কেনাবেচা কতখানি ভূমিকা রাখছে- সেটিও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল সেই শহরে।

উহানে প্রথম যে ব্যক্তি করোনায় মারা গিয়েছিলেন, উহানের সি ফুড মার্কেটে তার নিয়মিত যাওয়া আসা ছিল বলে জানিয়েছে চীনের সরকার।

সি ফুড মার্কেটে গৃহপালিত ও সামুদ্রিক প্রাণী ছাড়াও বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি হতো। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী- বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্য প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রথম সংক্রমিত হয় সার্স-কোভ-২ বা ভাইরাস, যা পরে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ অবশ্য চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য বাতিল করে দিয়ে বলেছে, উহানের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে এই ভাইরাসটি প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং সেই গবেষণাগারের কর্মচারীদের অসতর্কতার ফলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা মহামারির শুরু বিষয়ক এই তত্ত্ব আন্তর্জাতিকভাবে ‘ল্যাব তত্ত্ব’ নামে পরিচিত।

তবে চীন এই তত্ত্বকে শুরুতেই বাতিল করে দিয়ে বলেছে, করোনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার অভিপ্রায় থেকে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ