যুক্তরাজ্যের সঙ্গে প্রতিরক্ষা আলোচনা বাতিল করেছে ফ্রান্স। চলতি সপ্তাহেই ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি ও ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে টানাপোড়েনের কারণে বৈঠকটি বাতিল করল প্যারিস।

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। এর আগে ওই তিন দেশের বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল দেশটি।

ওই দু’টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগতভাবেই নিয়েছেন ফরাসি সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। অন্যদিকে বৈঠক বাতিল ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও। এর আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও এই বৈঠকটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল ওই সূত্র।

চীনকে মোকাবিলা করতে প্রভাবশালী পশ্চিমা তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে অকাস নামের একটি নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করার কয়েকদিন পরেই এই সমঝোতা বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ে। ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের জন্য উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।

পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিধর সদস্য ফ্রান্স এই চুক্তির কঠোর সমালোচনা করেছে। অকাসের তীব্র নিন্দা করে বলেছে- এর মাধ্যমে তাদের ‘পিঠে ছুরি মারা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয়েছে প্যারিস। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের পূর্ব-স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতার অবসান ঘটেছে।

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের সেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।

কিন্তু অকাস চুক্তিটি ফ্রান্সের জন্য একদিকে অর্থনৈতিক ধাক্কা। তেমনি নতুন এই নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা ফরাসি নেতাদের জন্য বিস্ময়করও, কারণ এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। নতুন এই জোট গঠনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়।

রোববার ফরাসি সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিন দেশের বিশেষ নিরাপত্তা চুক্তি ও সাবমেরিন ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েকদিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

টিএম