চীনকে ঠেকাতে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের তৎপরতা মোকাবিলায় ৮টি পরমাণু প্রযুক্তির (নিউক্লিয়ার) সাবমেরিন বানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগর ও তার অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা এবং এই অঞ্চলে চীনের যে দখলদারিত্বমূলক তৎপরতা- তা প্রতিহত করতে বুধবার এক বৈঠকে মিলিত হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া। সেই বৈঠকেই নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নির্মাণ বিষয়ক প্রযুক্তি বিনিময় চুক্তি সাক্ষরিত হয় অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে।
বিজ্ঞাপন
নতুন এই জোটে যুক্ত হতে ফ্রান্সের সঙ্গে সাবমেরিন নির্মাণ বিষয়ে পূর্বের যে চুক্তি ছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া।
অবশ্য আপাতভাবে এতে অস্ট্রেলিয়া লাভবান হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্ব রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ। কারণ, সাধারণ সাবমেরিনের চেয়ে নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের ক্ষমতা অনেক বেশি এবং ব্রিটেনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই প্রযুক্তি পেতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নির্মাণ বিষয়ক প্রযুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৮ সালে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এ সম্পর্কে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি দিনকে দিন জটিল থেকে জটিলতর রূপ নিচ্ছে, বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চল, ইন্দো-প্যাসিফিকে (প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) এই জটিলতা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি।’
‘বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে উপস্থিত, সেগুলো মোকাবিলা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার রক্ষার প্রয়োজনেই নতুন এই জোট গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোটের অংশিদার দেশগুলোর সমঝোতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক জলপথ দক্ষিণ চীন সাগর। প্রতিবছর বিশ্বের অন্তত এক তৃতীয়াংশ পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে এই পথ দিয়ে।
জাপান, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অভিযোগ- চীন এই সাগরে নিজেদের জলসীমার বাইরেও অন্যান্য দেশের জলসীমা এবং এই জলপথের নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগারীয় দ্বীপগুলো নিজেদের দখলে আনার চেষ্টা করছে।
চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বুধবারের বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, তাতে চীনের নাম নেওয়া হয়নি। তবে বলা হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় সাম্প্রতিক সামরিক উপস্থিতি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়াতে নতুন এই জোট গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরির উদ্যোগকে ‘শীতল যুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেছে চীন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সত্যি কথা বলতে, নতুন এই জোটের অংশীদাররা এখনও শীতল যুদ্ধের মানসিকতা নিয়ে চলে এবং আদর্শগত সংস্কারে ভোগে।’
‘আমাদের কখনও এমন কোনো কাজে যুক্ত থাকা উচিত নয় যা অন্যদের জন্য অস্বস্তি বা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ