গত ১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশের মধ্য দিয়ে গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। রাষ্ট্রক্ষমতায় তালেবানের আসীন হওয়ার একমাস পেরিয়ে গেছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, খাদ্য ও মেধা সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারও মারাত্মক এক আর্থিক সংকটে পড়েছে।

তড়িৎগতিতে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে অর্জিত সামরিক সাফল্যকে স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সরকার ব্যবস্থায় রূপান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে কাজটি তালেবানের জন্য সহজ হচ্ছে না। নানামুখী সংকটের মধ্যে পড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত এক দেশের সরকার চালাতে গিয়ে তালেবান হিমশিম খাচ্ছে।     

রয়টার্স লিখেছে, চার দশকের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ধকল এবং যুদ্ধ-সংঘাতে লাখো মানুষের প্রাণহানির পর মার্কিন সেনার বিদায়ের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ঠিকই কিন্ত গত দুই দশকে উন্নয়ন খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন খাঁদের কিনারে দাঁড়িয়েছে।

যুদ্ধ-সংঘাতের মধ্যে খরা ও দুর্ভিক্ষ দেশটির হাজার হাজার মানুষকে গ্রাম থেকে শহরে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপির) আশঙ্কা, দেশটিতে যে খাদ্য মজুত আছে চলতি মাসের শেষদিকেই তা ফুরিয়ে যেতে পারে। এতে করে এক কোটি ৪০ লাখের বেশি আফগান পড়তে পারেন অনহারের মুখে।   

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ এখন শুধু আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার নারীদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে কিনা বা আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে তা নিয়ে। কিন্তু দেশটির সাধারণ মানুষের বেশিরভাগের কাছে অধিকার নয় বরং অগ্রাধিকার পাচ্ছে কোনোমতে টিকে থাকা।    

কাবুলের বাসিন্দা আবদুল্লাহ যেমন বলছিলেন, ‘শিশুরাসহ আফগানিস্তানের প্রতিটি মানুষ এখন ক্ষুধার্থ। তাদের কাছে এক ব্যাগ ময়দা কিংবা রান্না করার মতো তেল নেই।’ ব্যাংকের সামনে এখনো দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। কাউন্টারে যেতে পারলেও দেশের রিজার্ভ জব্দ হওয়ায় এক সপ্তাহের জন্য ২০০ ডলারের বেশি তোলা যাচ্ছে না। 

এটা তো মধ্য ও নিম্নবিত্তদের যাদের ব্যাংকে আমানত আছে তাদের জন্য। সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয়। অর্থকষ্টে তারা থালাবাসান, হাঁড়ি-পাতিল, বালিশ, কম্বল, ফ্যানসহ ঘরের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিক্রি করবেন বলে। কমমূল্যে এসব বিক্রির জন্য কাবুলে অস্থায়ী হাঁটও গড়ে উঠেছে। 

তবে এই অবস্থা যে একেবারে নতুন করে শুরু হয়েছে তা-ও নয়। শত শত কোটি ডলারের বিদেশি সাহায্য সত্ত্বেও আফগানিস্তানের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকছিল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল না। চাকরি পাওয়া যেন সোনার হরিণ। এছাড়া অস্থিরতার কারণে জুলাই থেকে অনেক সরকারি কর্মী বেতনও পাননি।   

রয়টার্স লিখেছে, চার দশক ধরে দফায় দফায় যুদ্ধ ও সংঘাত দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আফগানরা। সর্বশেষ মার্কিন সেনাদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে লড়াইয়ের অবসানকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। তবে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলেও অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে তাদের কারো চোখেমুখে এখনো স্বস্তির দেখা মিলছে না।  

জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানী কাবুলের বিবি মাহরো এলাকার এক কসাই যেমন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এখন নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। কিন্তু আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন আমাদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ আরও তিক্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ।’   
  
এএস