কেন মিয়ানমার থেকে ব্যবসা গোটাচ্ছে টেলিনর?
নরওয়েভিত্তিক টেলিযোগাযোগ জায়ান্ট টেলিনর মিয়ানমারে নিজেদের ব্যবসা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; কিন্তু কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এতদিন এ সম্পর্কে কিছু না বললেও সম্প্রতি কোম্পানির এশিয়া বিভাগের প্রধান জার্গেন রস্ট্রুপ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই সিদ্ধান্তের কারণ জানিয়েছেন।
রস্ট্রুপ বলেছেন, বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন খাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা ও ফোনে নজরদারি করার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তার অব্যাহত চাপের কারণে কোম্পানি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছর জুলাইয়ে টেলিনর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, লেবাননভিত্তিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এমআই গ্রুপের কাছে নিজেদের মিয়ানমারের ব্যবসা বিক্রি করে দেবে কোম্পানি।
সাক্ষাৎকারে টেলিনরের এশিয়া বিভাগের প্রধান বলেন, ‘সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আমাদের মধ্যে সন্দেহ ছিল যে, তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের ফোনে নজরদারির জন্য আমাদের চাপ দেবে; এবং আমাদের সেই সন্দেহ ইতোমধ্যে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
‘সামরিক সরকার আমাদের জানিয়ে দিয়েছে- মিয়ানমারে ব্যবসা করতে হলে, নাগরিকদের ফোনে নজরদারি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ইনস্টল করতে হবে।’
‘কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ বিষয়ক বিধি অনুযায়ী, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নয়- এমন কোনো সরকার যদি কোনো ইউরোপীয় কোম্পানিকে এ ধরনের নির্দেশ দেয়, সেক্ষেত্রে তা মানতে বাধ্য নয় সেই কোম্পানি। তাছাড়া, এ ধরণের নির্দেশ আমাদের মূল্যবোধ ও আদর্শের পরিপন্থী।’
‘আমরা সামরিক বাহিনীর নির্দেশ না মানা এবং মিয়ানমারের ব্যবসা বিক্রি করে এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ ছিল না।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সামরিক সরকারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু ওই মুখপাত্র টেলিনরকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তবে তিনি বলেছেন, কোনো কোম্পানি তার ব্যবসা পরিচালনা করবে, না গুটিয়ে নেবে – সেটি একান্তভাবেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে সরকারের কোনো বক্তব্য নেই।
মিয়ানমারে যেসব বহুজাতিক কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে তার মধ্যে প্রধান বা নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টেলিনর। গত বছর টেলিনরের মোট আয়ের সাত শতাংশেরও বেশি এসেছে মিয়ানমার থেকে এবং দেশটিতে টেলিনরের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
বিশ্বের ৩০ টি দেশে ব্যবসা রয়েছে টেলিনরের। বাংলাদেশে এই টেলিকম জায়ান্ট গ্রামীণ ফোন নামে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ