ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপের দৃশ্য টিভিতে দেখছেন উত্তর কোরিয়ার নাগরিকরা। গত সোমবারের ছবি

ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষা চালানোর দু’দিনের মাথায় এবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির পূর্ব উপকূলের দিকে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পিয়ংইয়ং। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এদিকে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস)। এর আগে জেসিএস অজ্ঞাত একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল।

জাপানের কোস্ট গার্ডও নিশ্চিত করেছে যে, উত্তর কোরিয়া একটি বস্তু নিক্ষেপ করেছিল এবং সেটা একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল হতে পারে।

এদিকে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সর্বশেষ এই ঘটনাকে ‘ভয়ানক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। তিনি বলছেন, এর ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

পিয়ংইয়ং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালেও এটি মূলত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার জন্য প্রণীত জাতিসংঘের প্রস্তাবনার পরিপন্থি। দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপান এখনও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

সর্বশেষ এই পরীক্ষার মাত্র কিছুদিন আগে উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। গত সোমবার পরীক্ষা চালানো এসব মিসাইল ১৫০০ কিলোমিটার (৯৩০ মাইল) দূরের লক্ষবস্তুতে সফলভাবে আঘাত করতে পারে। অর্থাৎ পিয়ংইয়ংয়ের ক্রুজ মিসাইল জাপানের বেশিরভাগ স্থানে আঘাত করতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও আশঙ্কা করছে যে, মিসাইলগুলো পরমাণু পরীক্ষার অংশ হতে পারে। অবশ্য জাতিসংঘ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেনি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মনে করেন, ক্রুজ মিসাইলের চেয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেশি ধ্বংসাত্মক। কারণ এটি বড় আর শক্তিশালী বোমা বহন করতে পারে এবং অনেক দ্রুত বেশি দূরে যেতে পারে।

এদিকে দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইলের সফল পরীক্ষার পর গত সোমবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে উত্তর কোরিয়া। দেশটি তাদের এই নতুন অস্ত্রকে ‘বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ কৌশলগত অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। দেশটির নেতা কিম জং উনের চাওয়া অনুযায়ী এটি দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে বলেও জানিয়েছিল পিয়ংইয়ং।

গত কয়েকমাস ধরেই উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন কিম জং উন। কিছুদিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দেশের বিজ্ঞানীরা একাধিক ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরি করেছে। যা উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি অনেকটা বৃদ্ধি করেছে।

এরপরেই গত মার্চ মাসে একটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়া। যার কারণে দেশটির বিরুদ্ধে সেসময় বেশ কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

এবার এক সপ্তাহের মধ্যেই একাধিক দূরপাল্লার মিসাইলের পরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি সর্বশেষ ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করলো দেশটি। এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টিএম