এক সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গঙ্গা ও তার শাখা নদীগুলো ছিল ইলিশের অন্যতম প্রজনন ক্ষেত্র। কিন্তু সম্প্রতি সেই চিত্র বদলেছে। প্রজননের জন্য গঙ্গার পরিবর্তে বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমারের বড় নদীগুলো বেছে নিচ্ছে ইলিশ।

বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের নদীতে ইলিশের আনাগোনা নতুন নয়। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন তথ্য না পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনাসহ বড় নদীগুলোতে যে ইলিশের আনাগোনা বেড়েছে তা বাংলাদেশের মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যায়।

বাংলাদেশের মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে। পরিসংখ্যান আরও বলছে, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের খুলনা, চট্টগ্রাম, ভোলা ও পটুয়াখালীর মোহনায় প্রায় ৫৯ লক্ষ টন ইলিশ উঠেছে।

অন্যদিকে, ভারতের মৎস্যজীবীদের সংগঠন ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে গঙ্গায় ইলিশের আনাগোনা প্রায় শূন্য।

পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা মোহনার তীরবর্তী কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সদানন্দ হালদার এ সম্পর্কে ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে বলেন, ‘পনেরো দিন মোহনায় ভেসে শস্য (পশ্চিমবঙ্গ মোহনার মৎস্যজীবীরা ইলিশকে এ নামেই ডাকেন) উঠল সাকুল্যে খান চল্লিশেক। এমন দিন এল কেন?’

সদানন্দ হালদারের এ হাহাকারের উত্তর আনন্দাবাজারকে দিয়েছেন ভারতের নদী বিষয়ক আধা সরকারি সংস্থা এসএএনডিআরপির (সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অব ড্যাম রিভার অ্যান্ড পিপল) মৎস্য বিশেষজ্ঞ নীলেশ শেট্টি।

আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘বড্ড বেশি অবহেলা করা হয়েছে গঙ্গাকে। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার পাড় বরাবর গড়ে উঠেছে একশরও বেশি পুরসভা (পৌরসভা)। সেগুলোর যাবতীয় আবর্জনা এবং নদী বরাবর গড়ে ওঠা কলকারখানার বর্জ্যে গঙ্গার দূষণ মাত্রা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। নোনা জলের ঘেরাটোপ থেকে তার ডিম সংরক্ষণে ইলিশের প্রয়োজন কিঞ্চিৎ মিষ্টি জলের। নদীর কাছে সেজন্যই ফিরে আসে তারা। কিন্তু দূষণের ধাক্কায় গঙ্গার লবণের মাত্রা (স্যালিনিটি) অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে।’

অন্যদিকে, বাংলাদেশের মৎস্য দফতরের প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তা শহিদুল্লার ব্যাখ্যা, পদ্মা কিংবা শাখা নদীর লাগোয়া এলাকায় ভারী শিল্প তেমন নেই। ফলে দূষণে বাংলাদেশের মোহনা এখনো ইলিশের কাছে ব্রাত্য হয়ে ওঠেনি। জলে মিষ্টতাও হারায়নি।

গঙ্গার আরও কয়েকটি ‘গভীর অসুখের’ কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নদী বিশেষজ্ঞরা। গঙ্গা দূষণ প্রতিরোধ কমিটির হাই কোর্ট নিয়োজিত সদস্য ছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্রোত কমছে। অকাতরে চলছে বালি তোলা।’ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পর্ষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এসএমডব্লিউ