আগামী বছরের শুরুর দিকে উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। রোববার প্রকাশিত ভারতের একটি জাতীয় দৈনিকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বিজেপি সরকার বিরাট বিজ্ঞাপন নিয়েই মূলত এই অস্বস্তি। 

রোববার সকালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত ওই বিজ্ঞাপনে উত্তরপ্রদেশের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিশাল ছবি সমেত যে রাজ্যের উন্নয়ন সংক্রান্ত সূচক যে ছবি ছাপা হয়েছে তা আসলে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর কলকাতার একটি ফ্লাইওভারের ও স্কাইলাইনের। বিপত্তির শুরু এখানেই।  

এ তথ্য সামনে আসতেই মমতা বন্দোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস সঙ্গে সঙ্গে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বিদ্রুপ করে চলেছে। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে দায় চাপানো হচ্ছে বিজ্ঞাপন সংস্থার ওপরেই। ছবি-বিভ্রাটের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট পত্রিকাটিও, তবে তাতে বিতর্ক আরও বেড়েছে।

ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ভোট সামনে রেখেই রাজ্য সরকার পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তার শিরোনাম ‘ট্রান্সফর্মিং উত্তরপ্রদেশ’। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কীভাবে রাজ্যের পরিবর্তন করেছেন, ফলাও করে তার বর্ণনা ছিল সেখানে। কিন্তু গন্ডগোল বাঁধে বিজ্ঞাপনের ছবিটিতেই।

ওই ছবিতে নীল-সাদা রেলিং দেওয়া মা ফ্লাইওভার, আইকনিক হলুদ ট্যাক্সি আর দিগন্তের পাঁচতারা হোটেল থেকে নিমেষেই চিনে নেওয়া যায় ওই ছবিটি আসলে ছবিটি কলকাতার। বিজেপির হারের আগে যে রাজ্যে মাত্র কয়েকমাস আগেই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচার করে গিয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথ।

বিজেপির বিভ্রাট লুফে নিতে এতটুকুও দেরি করেনি তৃণমূল। দলের জাতীয় মুখপাত্র ও এমপি মহুয়া মৈত্র বলছেন, ‘এটা একদিকে যেমন হাস্যকর, তেমনি আবার আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই! তার কারণ যোগী তো উত্তরপ্রদেশে কিছু করেননি, কাজেই তাকে রাজ্যের উন্নয়নের ছবি দিতে হলে অন্যের থেকে ধার করতেই হতো।’

মহুয়া বলেন, ‘আমাদের কলকাতার ফ্লাইওভার, হলুদ ট্যাক্সি আর জে ডাব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলের ছবির কাছে ওনাকে হাত পাততে হচ্ছে দেখে আমাদের বেশ ভালই লাগছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মমতা বন্দোপাধ্যায় গোটা দেশকেই এখন দিশা দেখাচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারও তার ব্যতিক্রম নয় বলেই মনে হচ্ছে।’

বিষয়টি নিয়ে উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লিতে বিজেপির নেতারা কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি তাদের জানা নেই বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য্যের দাবি, ভুলটা আসলে বিজ্ঞাপনী সংস্থার, রাজ্য সরকারের নয়।

তিনি বলেন, ‘সবাই জানি বিজ্ঞাপন দেয় এজেন্সি। এখানে ভুলবশত কলকাতার ছবি দেওয়া হয়ে থাকলে তার দায় সেই এজেন্সিরই। কোনো সরকারই ইচ্ছে করে এমন ভুল করবে না। আর বিজেপি যদি দারুণ ফ্লাইওভারের ছবি দিতে চায় তাহলে আমাদের আমলে করা মহারাষ্ট্র বা গুজরাটের ছবিই দেবে, কলকাতারটা কেন দিতে যাবে?’

রোববার দুপুরের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাগোষ্ঠী অবশ্য টুইট করে জানায় ভুলটা তাদের মার্কেটিং বিভাগেরই এবং তাদের সব ডিজিটাল সংস্করণ থেকেই বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসর মহুয়া মৈত্রের ধারণা, পত্রিকাটিকে আসলে চাপ দিয়েই তাদের এই ভুল স্বীকারে বাধ্য করা হয়েছে।

এর নেপথ্যের ঘটনা যাই হোক, গোটা ভারতে এখন বিজেপির সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস, আর সেই তৃণমূল কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের অবকাঠামোর ছবি নিজেদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে যোগী আদিত্যনাথের সরকার ও দলীয়ভাবে বিজেপিকে এখন যে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে, তা বেশ স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে।

এএস