টিকা দেওয়া শুরুর পর যেসব মানুষের টিকা নেওয়ার কথা তাদের এক-তৃতীয়াংশই টিকা না নেওয়ায় জনমনে টিকার ব্যাপারে আস্থা তৈরির চেষ্টা করছে বিশ্বের বৃহত্তম করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা দেশ ভারত।  

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, করোনার টিকা নেওয়ার পর দেশে দুজনের মৃত্যুর কথা গতকাল সোমবার নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার।  

ভারেতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, হ্রদরোগজনিত কারণে গত শনিবার উত্তরপ্রদেশে ৫২ বছর বয়সী যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকার ইনজেকশন নিয়ে তার মৃত্যু হয়নি। 

শনিবার শুরুর পর তিন দিনে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ জনকে টিকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। 

এছাড়া টিকা নিয়ে কর্ণাটক রাজ্যের ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে (হার্ট অ্যাটাক) মারা যান। তার মরেদহের ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি অবশ্য এখনও প্রক্রিয়াধীন।  

সরকার বলছে, টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রথম তিন দিনে টিকা নিয়ে ৫৮০ জনের দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে তাদের অবস্থা কতটা গুরতর এবং তাদের মৃত্যুর কারণ টিকা কিনা এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। 

গত সপ্তাহে (১৬ জানুয়ারি) বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে ভারতে। জুলাইয়ের মধ্যে ত্রিশ কোটি মানুষকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার চিন্তা করছে ১৩ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল এই দেশ।

গত তিন দিন রাজধানী নয়া দিল্লিতে টিকা নেওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ৫৩ শতাংশ টিকা নিয়েছেন। 

শনিবার শুরুর পর তিন দিনে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ জনকে টিকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। 

একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, গত তিন দিন রাজধানী নয়া দিল্লিতে টিকা নেওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ৫৩ শতাংশ টিকা নিয়েছেন। 

দিল্লি করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের সদস্য সূনীলা গার্গ বলছেন, ‘এইতো সবে শুরু এবং আমরা বুঝতে পারছি যে টিকাদান কর্মসূচি কতটা ভালোভাবে চলে এবং টিকাগুলোতে কি হয় তা দেখার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে।’  

নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিবন্ধিত মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাডুতে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের মনে আস্থা তৈরি হলে টিকা নেওয়ার এই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়তে শুরু করবে। আর এ জন্য অবশ্য টিকা নিয়ে যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে আমাদের।’ 

মানুষ খুব ভয়ে আছে। আমরা তো কাউকে তো জোর করে টিকা নিতে বাধ্য করতে পারি না। কারণ টিকা তারাই নেবেন যারা স্বেচ্ছায় টিকা নিতে চান

ভারতীয় এক চিকিৎসক

ভারতের জাতীয় দৈনিক হিন্দু এক প্রতিবেদনে লিখেছে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিবন্ধিত মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাডুতে। 

এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, উত্তর ভারতের রাজ্য হরিয়ানার রোহটাক জেলার একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিবন্ধিত একশো জনের মধ্যে মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়েছেন।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ খুব ভয়ে আছে। আমরা তো কাউকে তো জোর করে টিকা নিতে বাধ্য করতে পারি না। কারণ টিকা তারাই নেবেন যারা স্বেচ্ছায় টিকা নিতে চান।’  

ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, ‘একদম শুরু থেকে আমরা মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে আসছি যে, টিকা নিয়ে যেসব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তারা যেন এসব কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়।’  

জনমনে টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ তৈরি হওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন তার টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে ‘টিকা কার্যকর’ (ভ্যাকসিন ওয়ার্কস) একটি শব্দবন্ধ যুক্ত করে দিয়েছেন।  

গণমাধ্যমকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, ‘একদম শুরু থেকে আমরা মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে আসছি যে, টিকা নিয়ে যেসব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তারা যেন এসব কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়।’  

উল্লেখ্য, ভারতে এক কোটি দশ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশটি দুটি কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদন দিয়েছে। একটি অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত। অপরটি উদ্ভাবন ও তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন আহ্বান জানিয়ে অবশ্য এও বলেছে যে, টিকা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। কেউ টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছেও মত পাল্টালে তার টিকা না নিয়ে ফিরে আসার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশজুড়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। নিবন্ধিত সবাইকে টিকা নিতে বারবার অনুরোধ করে আসছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন আহ্বান জানিয়ে অবশ্য এও বলেছে যে, টিকা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। কেউ টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছেও মত পাল্টালে তার টিকা না নিয়ে ফিরে আসার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

টিকা নেওয়ার পর প্রতি একশো জনের মধ্যে একজনের সামান্য শারীরিক অসুবিধা হতে পরে বলে আগেই সতর্ক করে দিয়েছে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই প্রতিটি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ।

টিকা নিয়ে আধ ঘণ্টা বসতে হবে পর্যবেক্ষণ কক্ষে। ইনজেকশন নেওয়ার জায়গায় ব্যথা, শক্ত হয়ে ফুলে ওঠা, মাথা ঘোরা, বমি ভাবের মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন চিকিৎসকরা।

কোন কোন বিশেষ অবস্থায় প্রতিষেধক নেওয়া উচিত নয়, কাদের টিকাকরণের সময়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে—এই সব নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রকাশ করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায় ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো।

এএস