অবিশ্বাস্য আতঙ্কে আছেন আফগান নারীরা : জাতিসংঘ
রাজনৈতিক পালাবদলের পর আফগানিস্তানের সমাজে নারীদের অবস্থান কেমন হবে এবং তারা কতখানি সামাজিক অধিকার ভোগ করবেন-বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না হওয়ায় আফগান নারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের নারী বিষয়ক উপপ্রধান অ্যালিসন ডাভিডিয়ান।
বুধবার কাবুল থেকে নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তালেবান এখনও নারীদের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুরোপুরি স্পষ্ট করেনি এবং এ ব্যাপারটি আফগান নারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পুরো আফগানিস্তানের নারীরাই এখন তাদের ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কে আছেন।’
বিজ্ঞাপন
তালেবানের সাবেক শাসনামলের স্মৃতিই এই আতঙ্কের প্রধান কারণ উল্লেখ করে অ্যালিসন ডাভিডিয়ান বলেন, ‘গত শতকের নব্বইয়ের দশকের স্মৃতি এখনও আফগান নারীদের মনে জ্বলজ্বল করছে। তাদের আতঙ্কের প্রধান কারণ এটিই।’
১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক জোট সরকারকে হটিয়ে প্রথমবার দেশটিতে সরকার গঠন করেছিল তালেবান। সে সময় নারীদের স্কুলশিক্ষাসহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তৎকালীন তালেবান সরকার।
এমনকি, বাবা-ভাই-স্বামী-পুত্র বা কোনো বৈধ পুরুষসঙ্গী ছাড়া নারীদের ঘর থেকে বের হওয়াও ছিল সেসময় নিষিদ্ধ। ২০০১ সালে মার্কিন-ন্যাটো অভিযানে পতন হয় তালেবান সরকারের। আফগান নারীরাও তাদের অধিকার ফিরে পেতে শুরু করেন।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ২০ বছর পর ফের আফগানিস্তানে সরকার গঠন করেছে তালেবান বাহিনী। তালেবান মুখপাত্ররা যদিও বলেছেন, ইসলামি শরিয়া আইনে নারীদের যতটুকু স্বাধীনতা স্বীকৃত, ততটুকু তারা স্বীকার করে নেবেন— কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মাত্রা কতটুকু হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি তালেবান।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এসবিএস নিউজকে জ্যেষ্ঠ এক তালেবান নেতা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের নারীদের ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি হাজির করে ওই তালেবান নেতা বলেছেন, ‘কারণ, এর কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু, নারীরা যদি ক্রিকেট খেলেন, সেক্ষেত্রে তাদের শরীর উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
গত মঙ্গলবার তালেবানের শীর্ষ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে প্রধান করে নতুন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেছে তারা; তবে সেই মন্ত্রিসভায় কোনো নারীর স্থান হয়নি।
সরকার ব্যবস্থায় নারীদের অন্তর্ভূক্তির দাবিতে পরের দিন বুধবার রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন শতাধিক নারী। কিন্তু তাদের বেধড়ক পিটিয়েছে তালেবান রক্ষীরা। নতুন এই সরকার সম্পর্কে অ্যালিসন ডাভিডিয়ান বলেন, ‘বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ছিল আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার গঠিত হবে। তালেবান সে বিষয়ক প্রতিশ্রুতিও এর আগে দিয়েছিল।’
‘নতুন এই সরকার গঠনের মাধ্যমে তারা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে এবং বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জনের যে সুযোগটি ছিল— তা কাজে লাগাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
সূত্র : রয়টার্স।
এসএমডব্লিউ