ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো

কেবল ঈশ্বরই তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) দেশের স্বাধীনতা দিবসে সরকারপন্থি ও বিরোধীদের সমাবেশের মধ্যেই তিনি এই মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি কার্যত দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শত্রুতে পরিণত করেছেন।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক দেশটির ব্রাসিলিয়া, সাউ পাউলো এবং রিও ডি জেনেরিও-সহ অন্যান্য শহরগুলোর সড়কে অবস্থান নেন। এসময় তারা দীর্ঘ সময় ধরে প্রার্থনা করেন এবং কট্টরপন্থি এই নেতার সমর্থনে স্লোগান দেন।

অন্যদিকে ‘বোলসোনারো, চলে যাও!’ স্লোগান দিয়ে দেশজুড়ে পাল্টা সমাবেশ ও র‌্যালি করেন বিরোধীরা। এএফপি বলছে, আগামী বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো ওই নির্বাচনে পরাজিত হবেন বলে জনমত জরিপে উঠে আসছে।

মঙ্গলবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় এক অনুষ্ঠানে জাইর বোলসোনারো বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন চাই। আমি এমন কোনো প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেবো না যেখানে সুপিরিয়র ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল কাউকে বাড়তি সুবিধা দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একমাত্র ঈশ্বরই আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারেন। আমি হয় জেলে যাবো, না হয় নিহত অথবা বিজয়ী হবো।’

এসময় তিনি ব্রাজিলের নির্বাচনী ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। তার অভিযোগ, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতারণায় জর্জরিত। তবে তার এই অভিযোগের পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ সামনে হাজির করেননি। এমনকি তদন্ত ও পর্যবেক্ষণের স্বার্থে প্রত্যেকটি ব্যালটের বাড়তি এক কপি করে প্রিন্ট মজুত রাখারও দাবি করেন তিনি।

ব্রাজিলের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৯৬ সাল থেকে দেশটিতে চালু হওয়া নির্বাচনী ব্যবস্থা খুবই ভালো।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ক্রমশই জনপ্রিয়তা কমছে বোলসোনারোর। বামপন্থি নেতা লুলা ডি’সিলভার কাছে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা, দেশের দুর্বল অর্থনীতি ও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে চলা বিবাদেও ব্যস্ত তিনি। তা সত্ত্বেও তিনি মনে করেন, মঙ্গলবারের এই মিছিল ও সমাবেশ পরবর্তী নির্বাচনে তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আরও শক্তিশালী করলো।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের মাধ্যমে সমর্থকদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন ব্রাজিলের বর্তমান এই প্রেসিডেন্ট। গত সপ্তাহে একটি বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এখন স্বাধীনতা অর্জনের সময় এসেছে। কেউ আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।’

এর আগে জাতীয় নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে দেশের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আমার সামনে তিনটি পথ খোলা আছে- কারাবরণ, মৃত্যু অথবা নির্বাচনে জয়লাভ।’

পরে অবশ্য কারাবরণের বিষয়টি নাকচ করে দেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে এমন কেউ নেই, যে আমাকে ভয় দেখাতে বা হুমকি দিতে পারে।’

ব্রাজিলের ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতির কড়া সমালোচক বলসোনারো গত কয়েকমাস ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিতে কারচুপির সুযোগ আছে। আসন্ন নির্বাচন ব্যালট পদ্ধতিতে না হলে তার ফলাফল মেনে নেবেন না বলে হুমকিও দিয়েছেন তিনি।

এর দু’দিন আগে দেশটির নির্বাচনী আদালত সাফ জানিয়ে দেয় যে, ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা নেই এবং ব্যালট পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা নিতান্তই অপ্রয়োজনী। ব্যালট কাগজের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের প্রস্তাবকে খারিজও করে দিয়েছেন আদালত।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বোলসোনারো ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগিদের বিরুদ্ধে একাধিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট।

টিএম