ইরানের আফগানিস্তান বিড়ম্বনা
ক্ষমতার পালাবদলে আফগানিস্তানে এখন চলছে তালেবানের শাসন। তবে প্রতিবেশী দেশ হলেও তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বড় ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েছে ইরান। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের সম্পর্কের কথা সবারই জানা। আর তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী শক্তি হিসেবে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ইরান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী- ইরানের কাছ থেকে সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে তালেবান।
বিজ্ঞাপন
শুধু তাই নয়, কাবুলের দখল নেওয়ার আগে তেহরান সফরের সময় তালেবানের প্রতিনিধিরা ইরানের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনাও পেয়েছিলেন। এছাড়া মার্কিন বাহিনী-সহ বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সময় তালেবানের অগ্রযাত্রায় উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছিলেন ইরানের কট্টরপন্থিরা।
তবে এসব কিছুকে একপাশে রাখলে মুদ্রার অপর পিঠে ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। বিবিসি বলছে, তালেবান মূলত ইসলাম ধর্মের সুন্নি মতাবলম্বীদের সংগঠন। আর তাই তালেবানের নীতি শিয়া মতাবলম্বী ইরানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সেসময় সেখানকার ৮ জন ইরানি কূটনীতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে তালেবানকেই সন্দেহ করেছিল তেহরান। এই ঘটনা ছাড়াও সেসময় আফগান শিয়া মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোরও অভিযোগ ছিল তালেবানের বিরুদ্ধে।
সেই পরিস্থিতিতে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছে গিয়েছিল ইরান। এছাড়া আফগান ভূখণ্ডে ইরানের তালেবান-বিরোধী মিত্রের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এমনকি তেহরানের এসব বন্ধুর মধ্যে এমন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন যারা পাঞ্জশিরে তালেবান-বিরোধীদের পক্ষে কথা বলে থাকেন।
আর তাই যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী শক্তি হওয়ার কারণে ইরান তালেবানের সমর্থক হলেও পাঞ্জশির উপত্যকায় গোষ্ঠীটির সামরিক অভিযান নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে সমালোচনায় মুখর হয়েছে তেহরান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের মুখে তালেবানের সমালোচনার ঘটনা এটিই প্রথম।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ বলেছেন, পাঞ্জশির থেকে যে খবর আসছে তা আসলেই উদ্বেগজনক। সেখানে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ইরান।
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উৎখাতের মাধ্যমে সোমবার পার্বত্য অঞ্চল পাঞ্জশির দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান। ইসলামি এই গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমাদের দেশকে যুদ্ধের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা হয়েছে। রাজধানী কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর পুরো দেশে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খতিবজাদেহ বলেছেন, ‘পাঞ্জশির প্রশ্নে, আমি এই বিষয়ে জোর দিয়েছি যে, আফগানিস্তানের সব প্রবীণ আলেমদের উপস্থিতিতে সংলাপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করা উচিত।’
বিবিসি বলছে, তালেবানের ব্যাপারে ইরানের এই দ্বিমুখী অবস্থান আসলে আফগানিস্তান ইস্যুতে দেশটির উভয় সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ। আর তেহরানের সর্বশেষ সমালোচনামূলক বক্তব্যেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে- তালেবানের সঙ্গে ইরান ঠিক কিভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়, সেটি নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দেশটি।
আফগানিস্তানের প্রধান শক্তি যেহেতু তালেবান, সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ইরান সামনে এগিয়ে যাবে নাকি মতাদর্শের মৌলিক পার্থক্যের কারণে তালেবানের সমালোনায় মুখর হবে; সেটি এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না দেশটি।
টিএম