ফাইজারের টিকা নেওয়ার ৬ মাসেই উধাও ৮০ শতাংশ অ্যান্টিবডি
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। বিপর্যস্ত মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও। মহামারিকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রয়োজন আরও বেশি টিকা প্রয়োগ। বিশ্বে বেশ কয়েকটি টিকা প্রয়োগের কাজ চললেও তাদের মধ্যে ফাইজারের টিকাকে বেশ কার্যকর বলে মনে করা হয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় উল্টো চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই অনেকের শরীর থেকে উধাও হয়ে গেছে ৮০ শতাংশের বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যুক্তরাষ্ট্রের বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে বসবাস করা বয়স্ক মানুষ ও তাদের সেবদাতাদের ওপর চালানো গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে সম্প্রতি দেশটিতে এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত ১২০ জন বয়স্ক ব্যক্তির এবং ৯২ জন সেবাদাতার রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা করা এসব ব্যক্তিরা ছয় মাস আগে ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। তবে রক্ত পরীক্ষায় তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৮০ শতাংশের বেশি হ্রাস পাওয়ার তথ্য উঠে আসে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক কতটা, সেটি জানতে রক্ত পরীক্ষার সময় মূলত হিউমোরাল ইম্যুনিটি বা অ্যান্টিবডি-মেডিয়েটেড ইম্যুনিটির বিষয়টিই পরীক্ষা করে দেখেন গবেষকরা। এতে দেখা যায়, করোনা টিকা নেওয়ার ছয় মাস পরই গ্রহীতাদের শরীর থেকে ৮০ শতাংশের বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।
এর আগে করা অন্য এক গবেষণায় ওই একই গবেষক দল দেখতে পায় যে, ইতোপূর্বে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত না হওয়া বয়স্ক ব্যক্তিরা করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি কমতে থাকে। যেটি কার্যত বয়সে ছোট সেবাদাতাদের অভিজ্ঞতার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে কম।
যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড ক্যানাডে জানিয়েছেন, গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে- করোনা টিকা নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করা বয়স্ক এসব নাগরিকদের ৭০ শতাংশের শরীরের রক্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খুবই দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে।
ক্যানাডে আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্যের মিল রয়েছে। করোনা টিকার উভয় ডোজ নেওয়ার পরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকায় সিডিসি বুস্টার ডোজের পরামর্শ দিয়েছিল। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকদের বুস্টার ডোজের আওতায় আনতে সংস্থাটি জোরালো পরামর্শ দিয়েছিল।
আর কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণায়ও বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারণে এখন টিকার বুস্টার ডোজ আরও গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
টিএম