আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত নারীদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে তালেবান। টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে ওই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় তারা। রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। নিজেদের অধিকার নিশ্চিতের এই বিক্ষোভে কয়েক ডজন আফগান নারী অংশ নিয়েছিলেন।

কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ ছিল নারীদের অধিকার নিয়ে। তালেবান নিয়ন্ত্রিত রাজধানী কাবুলে সেই আফগান নারীদেরকে গত শুক্রবার বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভের অংশ হিসেবে নারীরা কাবুলের একটি সেতু থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে যাত্রা শুরু করলে তাদের ওপর চড়াও হয় তালেবান সদস্যরা। এসময় বিক্ষোভরত নারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, নারীদের এই বিক্ষোভ তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগান ভূখণ্ডে যে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে, কাবুলে ও হেরাতে হওয়া এই বিক্ষোভ অন্যগুলোর তুলনায় সবচেয়ে বড়।

তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে নারীরা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আফগানিস্তানে তাদের সমানাধিকার এবং দেশটির রাজনীতি ও সম্ভাব্য নতুন সরকারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি তোলেন।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ‌‘উইমেন পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন নেটওয়ার্ক’ এর ব্যানারে একদল নারী গত শুক্রবার আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে মিছিল করেন ও স্লোগান দেন। আফগান সরকারের অংশ হওয়ার ও সংবিধানসম্মত আইন তৈরির দাবি জানান তারা।

তবে তালেবান বলছে, নতুন সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো কেমন হবে, সেটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, নতুন সরকারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও মন্ত্রিপরিষদে কোনো নারী স্থান পাবেন না।

তালেবানের নিষ্ঠুর শাসনের ভয় তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানজুড়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবানের শাসনের সময় নারীদের শিক্ষা এবং চাকরির অধিকার ছিল না। তারা কোনও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না।

আজিতা নিজামি নামে এক নারী সাংবাদিক তোলো নিউজ’কে বলেন, ‘২৫ বছর আগে তালেবান যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন আমাকে স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের ৫ বছরের শাসন শেষে আমি ২৫ বছর লেখাপড়া করেছি এবং সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমও করেছি। আমাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বার্থে, এটা আর কখনোই আমরা হতে দেব না।’

সুরাইয়া নামে অন্য এক বিক্ষোভকারী বার্তসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘(বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার সময়) তালেবান সদস্যরা বন্দুকের ম্যাগাজিন দিয়ে এক নারীর মাথায় আঘাত করে এবং ওই নারী এতে রক্তাক্ত হয়ে যান।’

টিএম