কাবুলের রাস্তায় নারীদের ‘বিরল’ বিক্ষোভ
কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে আসার পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ ছিল নারীদের অধিকার নিয়ে। তালেবান নিয়ন্ত্রিত রাজধানী কাবুলে সেই আফগান নারীদেরকে শুক্রবার বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
তালেবান শরিয়া আইনে দেশ শাসনের ব্রত নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসায় আফগান নারীরা আবারও অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন, এমন আশঙ্কার মধ্যে নারী অধিকার ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীরা কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে বিক্ষোভ করলেন।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে অল্পসংখ্যক নারী এই বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আফগানিস্তানে নারীদের সমানাধিকার ও দেশটির রাজনীতিতে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ‘উইমেন পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন নেটওয়ার্ক’ এর ব্যানারে একদল নারী আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে মিছিল করে ও স্লোগান দেয়। আফগান সরকারের অংশ হওয়ার ও সংবিধানসম্মত আইন তৈরির আহ্বান জানান তারা।
অবশ্য তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে কয়েকজন নারীর বাগবিতণ্ডা হয়। তখন একটি পুরুষ কণ্ঠে শোনা যায়, ‘চলে যাও।’ বিক্ষোভে নারীদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম ছিল। কিন্তু তালেবান শাসনের জন্য এটাকে একটি অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা দেশে নারীদের অধিকার ও গত দুই দশকে নারীর অগ্রগতিকে ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছে তালেবানদের প্রতি। তাদের দাবি, নারীদের কথাও শুনতে হবে, দেশের ভবিষ্যত নির্মাণে তাদেরও সরকারে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন অল্পসংখ্যক হলেও আফগান নারীদের এমন বিক্ষোভকে বিরল বলছে। কারণ কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান নারীদের অধিকার দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নয় বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বার বার অভিযোগ এসেছে।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলিনে তালেবান বলেছিল, ‘নারীরা আমাদের কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করতে পারবেন। ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।’
তালেবান আসার পর দ্রুতই কাবুলের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। আর এই বদলে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, কাবুলজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা নারীদের ছবি মুছে ফেলার পাশাপাশি নারীর ছবিতে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডও গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।
তালেবানের নিষ্ঠুর শাসনের ভয় তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানজুড়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবানের শাসনের সময় নারীদের শিক্ষা এবং চাকরির অধিকার ছিল না। তারা কোনও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না।
তালেবান দেশটির সরকারি কর্মজীবী নারীদের আপাতত ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে আফগানিস্তানে ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে পাঠদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তালেবানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী। পৃথক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেওয়ার পর থেকে ব্যাপকভাবে এই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে, আবারও হয়তো আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যেমন তালেবান এর আগেও করেছিল।
দ্রুতগতিতে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আফগানিস্তানের সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান বলেছিল, তারা ইসলামের আইনি ব্যবস্থা শরিয়া আইনের কঠোর বিধি-বিধান অনুযায়ী দেশ শাসন করবেন। সব ক্ষেত্রে তারা ইসলামি আইন চালু করবে।
এএস