আতঙ্কে দিন কাটছে আফগান নারী বিচারকদের
আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পালবদলের পর ব্যাপক আতঙ্কে দিন কাটছে দেশটির নারী বিচারকদের। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
নারী বিচারকদের আতঙ্কের প্রধান কারণ- যেসব অপরাধীকে তারা কারাদণ্ড দিয়েছিলেন, তালেবান বাহিনী কাবুল দখল করার পর প্রায় সব কারাবন্দিকে মুক্ত করে দেওয়ায় তারাও মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং এই কারামুক্ত অপরাধীদের কারণেই তাদের জীবন-সংশয় দেখা দিতে পারে।
বিজ্ঞাপন
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে নারী বিচারক আছেন মোট ২৫০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সম্প্রতি দেশত্যাগে সফল হয়েছেন। বাকিদেরও অধিকাংশ আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আফগানিস্তানের নারী বিচারকরা সবসময়ই জঙ্গিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের দুই নারী বিচারককে গুলি করে হত্যা করেছে আততায়ীরা।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান বাহিনী কাবুল দখল ও সব কারাবন্দিদের মুক্ত করে দেওয়ার পর নারী বিচারকদের মধ্যে আতঙ্ক কয়েকগুণ বেড়েছে। সম্প্রতি ইউরোপে আশ্রয় নেওয়া এক আফগান নারী বিচারক রয়টার্সকে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ’১৫ আগস্টের কাবুল দখলের পর ৪-৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আমার সরকারি কোয়ার্টারে এসে আমার খোঁজ-খবর করে গেছে। আমি তখন লুকিয়ে ছিলাম।’
‘তারা এসে কোয়ার্টারের কর্মচারী ও আমার পরিবারের সদস্যদের রীতিমত জেরা করেছে যে আমি কোথা আছি।’
সপ্তাহ খানেক আগে একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী ও নারী বিচারকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওম্যান জাজেস (আইএডব্লিউজে) এর সদস্যদের সহায়তায় আফগানিস্তান ত্যাগে সক্ষম হয়েছেন ওই নারী বিচারক।
এখনও আফগানিস্তানে রয়ে যাওয়া কয়েকজন নারী বিচারকের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে উল্লেখ করে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘তারা খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে। এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে।’
আফগানিস্তানের যেসব নারী বিচারক বর্তমানে কর্মরত আছেন, তারা বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দেশটিতে নারী বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য ১০ বছর মেয়াদি একটি কর্মসূচি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সেই কর্মসূচির অন্যতম কর্মকর্তা ও সাবেক মার্কিন নারী বিচারক প্যাট্রিসিয়া ওয়েলেন, ‘এই নারী বিচারকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। আর আজ তাদের জীবনের নিরাপত্তার যে সংশয় দেখা দিয়েছে, তার জন্য আমার নিজেদের দায়ী মনে হচ্ছে।’
‘এই অপরাধবোধের অনুভূতি ভয়ঙ্কর। এ রকম হওয়া উচিত ছিল না।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ