গত ১২ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি হেট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ২০২০ সালে। ওই বছর ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, অক্ষমতা এবং যৌনতা সংশ্লিষ্ট অপরাধের শিকার হয়েছেন বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিপোর্ট করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-র প্রকাশিত একটি বার্ষিক রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে বলে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এফবিআইয়ের ওই রিপোর্টটি গত সোমবার প্রকাশিত হয়।

রিপোর্টে দেখা গেছে, এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বিরুদ্ধে গতবছর বিদ্বেষমূলক অপরাধের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গরাই অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ১২ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে বিদ্বেষমূলক অপরাধ সবচেয়ে বেশি সংঘটিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই দেশটিতে এই সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে এফবিআইয়ের কাছে ৭ হাজার ৭০০-র বেশি অপরাধমূলক ঘটনার কথা রিপোর্ট করা হয়েছে। ২০০৮ সালের পর এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেই বছর এফবিআইয়ের কাছে এই ধরনের ৭ হাজার ৭৮৩টি অপরাধের তথ্য জানানো হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এফবিআইয়ের কাছে হেট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক অপরাধের তথ্য দিতে বাধ্য নয়। আর তাই এ ধরনের অপরাধের অনেক ঘটনাই গণনার বাইরে থেকে যায়। এছাড়া কোন ঘটনাকে হেট ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আর কোনটিকে করা হয় না, তা নিয়ে দেশটির স্থানীয় প্রসিকিউটারদের মধ্যেও মতভেদ থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব পড়ার পর দেশটিতে এশীয় আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এশীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে গত বছর ২৭৪টি বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এশীয়রা দায়ী; এই মনোভাবের কারণেই এ ধরনের হামলা ও অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পায় বলে ধারণা করা হয়।

তবে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি হামলা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান নাগরিকরা। গত বছরজুড়ে এই ধরনের ২ হাজার ৭৫৫টি অপরাধের তথ্য নথিভুক্ত করা হয়। এর ফলে ভিকটিম ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে ওপরে ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকানরা।

এফবিআই বলছে, সহিংসতার শিকার ৬২ শতাংশ মানুষকে বর্ণ বা জাতিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের কারণে ১৩ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ মানুষ যৌনতা সংশ্লিষ্ট হামলা ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

এছাড়া এসব হামলায় অভিযুক্ত ৬ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে ৫৫ শতাংশই শেতাঙ্গ বলেও জানিয়েছ এফবিআই।

টিএম