আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা গোটা একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। রোববার সন্ধ্যার ওই হামলায় নিহত দশ জনের সবাই একই পরিবারের। এর মধ্যে ছয়টি নিষ্পাপ শিশু। যাদের বয়স দুই থেকে বারো বছরের মধ্যে।

কাবুল বিমানবন্দরের পাশে যে বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া বোমা আঘাত হানে, শিশুগুলো তখন ওই বাড়িতেই খেলছিল। আচমকা বোমার আঘাতে প্রাণ যায় তাদের। মার্কিন হামলা থেকে ওই পরিবারের যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদের মধ্যে চলছে এখন শোকের মাতম। 

মার্কিন হামলায় প্রাণ হারানো ছয় শিশুর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স ছিল দুই বছর। তার নাম সুমায়া। সবচেয়ে বড় শিশুটির বয়স ১২ বছর। রামিন ইউসুফ নামে তাদের এক আত্মীয় বলছেন, ‌‘এটা অন্যায়, এটা পাশবিক। এই হামলা করা হয়েছে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।’

হামলার পর ওই পাশের বাড়িতে থাকা একজন বলেন, ‘হামলায় ওই বাড়িটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। প্রতিবেশীরা সবাই মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। আমি সেখানে ছয়জনের মরদেহ দেখেছি। এছাড়া আরও দুজনকে দেখেছি আহত।’

হামলায় প্রাণ হারানো সর্বকনিষ্ঠ দুই বছর বয়সী কন্যাশিশুর বাবা এমাল আহমাদি বিবিসিকে বলেন, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তারা অপেক্ষায় ছিলেন কখন তাদের ফোন করে বিমানবন্দরে যেতে বলা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় দুই বছরের এই শিশুসহ ছয় শিশুর প্রাণহানি হয়েছে।

পরিবারটির বেশিরভাগ মানুষ যুক্তরাষ্ট্র নয়তো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হয়ে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যেসব আফগানকে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই তালিকায় সবার আগে আহমাদিদের যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তাদের প্রাণহানি হলো। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলায় প্রাণ হারানোদের একজন নাসের। অথচ তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের হয়ে অনুবাদকের কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তালেবানের হাতে প্রতিহিংসার শিকারের ভয়ে ভীত সেই নাসের শেষে মার্কিন সেনাদের বোমা হামলাতেই প্রাণ হারালেন।

দুই বছরের মেয়েকে হারিয়ে এমাল আহমাদি এখন শোকে স্তব্ধ। কন্যাসহ নিষ্পাপ ছয়টি শিশু আর পরিবারের অন্যদের চোখের সামনে এভাবে মারা যেতে দেখে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যায় করেছে, অনেক বড় অন্যায় করেছে।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বাড়িটির সামনে রাখা একটি গাড়িতে ছিল বিস্ফোরক। গাড়িটি নিয়েই বিমানবন্দরে হামলা করতে চেয়েছিল আত্মঘাতী এক হামলাকারী। এমন তথ্য পেয়ে গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। সাধারণ মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা।

মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, কাবুলে ড্রোন হামলা চালিয়ে বিমানবন্দরে আরেকটি আত্মঘাতী হামলা ঠেকানো হয়েছে। ড্রোন হামলার লক্ষ্য ছিল একটি গাড়ি, যেখানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগান শাখার (আইএস-কে) অন্তত একজন সদস্য অবস্থান করছিল।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ১৭০ জন আফগানের প্রাণহানি ঘটেছিল। নিহত এসব মানুষের বেশিরভাগ দেশ ছাড়ার আশা নিয়ে বিমানবন্দরে ভীড় করছিলেন। সেদিনের ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।  

এএস