টানা ১০১ দিন ছিলেন হাসপাতালে। তার মধ্যে ৬৮ দিনই ছিলেন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে। করোনা সংক্রমণে দু’টি ফুসফুসই ফুটো হয়ে গিয়েছিল। জীবন-মরণ লড়াই শেষে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বাড়ি ফিরেছেন ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল।

ভারতের এ রাজ্যে মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছিল তুঙ্গে। জুলাই মাসে করোনায় সংক্রমিত হয়ে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় এক বেসরকারি হাসপাতালে ৪২ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থেকে করোনা জয় করেছিলেন রাঁচির বাসিন্দা গণেশ সিংহ। করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬৮ দিন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থেকে চন্দনের এ লড়াইকে নজিরবিহীন বলছেন চিকিৎসক দেবরাজ যশ।

পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাসিন্দা চন্দন করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৮ মে স্থানীয় সেবা নার্সিংহোমে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়াই ২৫ মে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। ওইদিনই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে জানান চন্দনের ভাই নন্দন মণ্ডল।

হাসপাতালে প্রথম কয়েক দিন সেরকম কোনো শারীরিক সমস্যা না হলেও যত দিন যায় চন্দনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা তত বাড়তে থাকে। এইচডিইউ-তে স্থানান্তর করা হয় তাকে। দিন কয়েকের মধ্যেই সেখান থেকে আইসিইউ-তে পাঠানো হয়। কিন্তু চন্দনের শ্বাসকষ্ট বাড়তেই থাকে। পরীক্ষা করে দেখা যায়, করোনার কবলে পড়ে চন্দনের ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে।

৩ জুন চন্দনকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৬৮ দিন ভেন্টিলেটরেই ছিলেন চন্দন। কিন্তু এতেও রেহাই মেলেনি চন্দনের। ভেন্টিলেটরে থাকলেও ‘বাইল্যাটারাল নিউমোথোরাক্স’ অর্থাৎ চন্দনের দুটো ফুসফুসই ফুটো হয়ে যায়। ওই ফুটো দিয়ে হাওয়া বেরিয়ে জমে যায় ফুসফুসের বাইরের পর্দায়। শুধু তাই নয়, ত্বকের নিচে টিস্যুতে হাওয়া জমে গিয়ে চন্দনের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে।

করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে যায়। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের মতোই চলতে থাকে ‘পোস্ট কোভিড’ সমস্যার চিকিৎসা।

চিকিৎসক দেবরাজ বলেন, এ অবস্থা থেকে বেঁচে ফেরাকে মিরাকল বলা যেতে পারে। তবে ওর বয়স কম হওয়ার জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস নিয়েও সমানে লড়াই চালিয়ে গেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় থাকে না।

চন্দনের মতো সংকটজনক রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্সদের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান এক চিকিৎসক।

বছর ৩৯-এর চন্দন পেশায় ব্যবসায়ী। ১০০ দিনের বেশি হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া ময়নার বাড়িতে। শারীরিক দুর্বলতা থাকায় এখনও অবলম্বন ছাড়া হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হচ্ছে চন্দনের। তাই আপাতত ফিজিওথেরাপি চলবে। 

দাদা পুনর্জন্ম পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে। চিকিৎসকরা যা করেছেন কী বলে যে ধন্যবাদ দেব ভেবে পাচ্ছি না, বললেন নন্দন।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসএসএইচ